নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রীতিমতো ফাঁপড়ে পড়েছেন লালবাজারের দুঁদে গোয়েন্দারা! চোর, ডাকাত, খুনিদের পাকড়াও করা যাঁদের কাজ, তাঁদের শেষমেশ ভগবান নাড়ুগোপালের ‘নিরুদ্দেশ’ হওয়ার কিনারা করতে হবে, কে জানত। তাও একেবারে জোড়া নাড়ুগোপাল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ‘দেবতা’দ্বয়কে উদ্ধার করা গিয়েছে। কিন্তু উদ্ধার হওয়া দেব বিগ্রহ তো আর পুলিশের মালখানায় রাখা যায় না! নিত্যপুজো আর সেবা তো দরকার! তাই নাড়ুগোপালের দুই বিগ্রহ ফিরে পেয়েছেন প্রকৃত মালিক। ঠাকুর ফিরে পেয়েই আপ্লুত মালিক। মামলা চালাতে আর আগ্রহী নন, এমনটাই জানিয়ে দিয়েছেন পুলিশকে।
চলতি মাসের ৫ তারিখ সন্ধ্যাবেলার ঘটনা। বাড়িতে গোপাল প্রতিষ্ঠার আগে কৃষ্ণভক্ত এক মহিলা অ্যালবার্ট রোডের ইসকন মন্দিরে এসেছিলেন জোড়া গোপাল কিনে। পিতলের তৈরি জোড়া নাড়ুগোপালের গলায় সোনার হার, কোমরে রূপোর কোমরবন্ধ। পুজো শেষে গোপালকে নিজের অশীতিপর মায়ের কাছে রেখে মহিলা ফের মন্দিরের ভেতরে যান। কিন্তু ফিরে এসে দেখেন, ইসকন প্রাঙ্গণ থেকে তাঁর জোড়া গোপাল রহস্যজনকভাবে উধাও! সদ্য মেলা দুই ‘নাড়ুগোপাল’ আচমকা উধাও হওয়ায় রীতিমতো মুষড়ে পরেন ভক্তপ্রাণা। খুঁজে দিতে হবে তাঁর দুই নাড়ুগোপালকে, এই আর্জি নিয়ে ছুটে যান পুলিশের দরজায়। শেক্সপিয়র সরণি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়।
গয়না সহ জোড়া গোপাল উদ্ধারে ডাক পড়ে লালবাজারের দুঁদে গোয়েন্দাদের। কিন্তু তদন্তে নেমে খেই হারিয়ে ফেলেন গোয়েন্দারা। প্রতিদিন ইসকন মন্দিরে হাজার হাজার ভক্তের আগমন ঘটে। এতো খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার শামিল! গোপালের খোঁজে নিজেদের সোর্সদের কাজে লাগান তাঁরা। যদি পাকা মাথার কোনও পুরনো চোরের কাজ হয়, তাহলে তার সন্ধান মিলবে ওই সোর্সদের কাছেই। কিন্তু শুধু তাদের উপর ভরসা করেননি গোয়েন্দারা। তাঁরা চোখ রাখেন মেট্রো রেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। মুশকিল আসানে সাহায্য করে মেট্রো রেলের সিসি ক্যামেরার এক ফুটেজ। টানা একমাসের ফুটেজ খতিয়ে দেখে বউবাজারের বাসিন্দা দুই মহিলাকে চিহ্নিত করে লালবাজার। ফুটেজে দেখা যায়, মেট্রো স্টেশনে গোপাল নিয়ে বসে আছেন তাঁরা।
বউবাজারে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে গোয়েন্দারা দেখেন, জোড়া নাড়ুগোপাল বহাল তবিয়তে নিত্য পুজো আর সেবা পাচ্ছেন। লালবাজারের এক সূত্র জানাচ্ছে, ‘ দুই মহিলার কারও অতীত অপরাধের রেকর্ড নেই। তাঁদের একজন তারাতলার হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়া। অপরজনের আবার সামনে বিয়ে। দুই মহিলা সত্যি অপরাধ-মনস্ক হলে, তাঁরা গয়না সহ জোড়া গোপাল বিক্রি করে দিতেন।’ মানবিক কারণে, এইপ্রথম থমকে যেতে হয় লালবাজারকে। পাশাপাশি নিজের হারানো জোড়া গোপাল খুঁজে পেয়ে আন্দন্দে আত্মহারা মহিলা আর মামলা চালাতেও আগ্রহী নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন। বাদী ও বিবাদী, দু’পক্ষই ইসকন ভক্ত, গোপাল অন্ত প্রাণ! গোপাল হাতানোর দায়ে দুই মহিলাকে গ্রেফতার করা হলে, জোড়া গোপালকে বাজেয়াপ্ত করে লালবাজার মালখানাতে জমা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ‘ভক্তের ভগবান’ নিত্যপুজো থেকে বঞ্চিত হবেন। যা চাইছিলেন না বাদী-বিবাদী কেউই। আপাতত পিছু হটতে হয়েছে লালবাজারকে। ‘রাখে গোপাল, মারে কে’!