এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের কতজন পরিযায়ী শ্রমিক শুধু ভাষাগত কারণে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন, আটক হয়েছেন বা হেনস্থার শিকার হয়েছেন, সেই সংক্রান্ত তথ্য জানতেই কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে লিখিত প্রশ্ন করেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্দেশ্য ছিল, বাস্তব চিত্র সামনে আনা এবং কেন্দ্রীয়ভাবে সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
কিন্তু সোমবার কেন্দ্রের শ্রম দপ্তর যে দু’পাতার জবাব দিয়েছে, তাতে এই প্রশ্নের উত্তরের ধারে-কাছে যায়নি। নিগ্রহের অভিযোগগুলির উল্লেখ তো নেই-ই, উল্টে পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের আটক, পুশ–ব্যাক বা বৈষম্যের প্রসঙ্গও পাশ কাটিয়ে গিয়েছে কেন্দ্র।
বরং শ্রম দপ্তর জানিয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিক সহ অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য কী কী সুবিধা রয়েছে, যেমন সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা, কাজের পরিবেশ, টোল-ফ্রি নম্বর, নথিভুক্তিকরণের প্রক্রিয়া— সেই সবের দীর্ঘ ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৭৯ সালের আইন কী ভাবে নতুন শ্রম কোডের রূপ নিয়েছে, সেটিও ব্যাখ্যা করেছে কেন্দ্র। কিন্তু মূল প্রশ্নের বিষয় হল, ‘বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের নিগ্রহ’— এই বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়েছে কেন্দ্রের মোদী সরকার।
ই–শ্রম পোর্টালে কত অসংগঠিত শ্রমিকের নাম নথিভুক্ত হয়েছে, তার পরিসংখ্যান দিলেও কোথাও নিগ্রহের বিরুদ্ধে কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য, তদন্ত বা অঙ্গীকার নেই। তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্র বিষয়টি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে।
এ দিকে, একই দিনে কোচবিহারের প্রশাসনিক সভা থেকে কড়া ভাষায় ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘বাংলায় কথা বললেই নাকি বাংলাদেশি! উর্দু ভাষায় তো পাকিস্তানের অনেকে কথা বলেন, আবার বিহার-যোগে উত্তরপ্রদেশের বহু মানুষও উর্দুতে কথা বলেন। ভারতে পাঞ্জাব আছে, পাকিস্তানেও পাঞ্জাব আছে। এঁরা কি কথা বললেই বিদেশি হয়ে যাবেন? অসমের মতো ডিটেনশন ক্যাম্প বাংলায় বানাতে দেব না।’
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘জাতি–ভাষা–পরিচয়’ নিয়ে এই বিভাজনের রাজনীতি দেশে বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি করছে এবং বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কেন্দ্রের উচিত দ্রুত হস্তক্ষেপ করা।