• দার্জিলিঙে শীত আরও গাঢ়! বড়দিনের আগেই বন্ধ হয়ে গেল ঐতিহাসিক গ্লেনারিজ়? বড় ধাক্কা পর্যটকদের...
    ২৪ ঘন্টা | ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • শীত পড়েছে। আর এই সময়ই ভ্রমণ পিপাসু বাঙালি ঘুরতে যান সবথেকে বেশি দার্জিলিঙ-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু শীতের মরসুম মানেই পর্যটকদের অন্যতম ঘোরার জায়গা হল দার্জিলিং। আর এই দার্জিলিংয়েরই জনপ্রিয় বার কাম রেস্তোরা গ্লেনারিজ (Glenarys) বন্ধ হল। বড়দিনের আগেই গ্লেনারিজ প্রিয় বাঙালি ও আপামোর পর্যটকের এই খবরে মাথায় হাত। পুলিস হঠাত্‍ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক। অভিযোগ, আবগারি নিয়ম অমান্য করার জন্যই নাইট ক্লাব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

    লাইভ মিউজিকের লাইসেন্স না থাকার কারণ দেখিয়ে মূলত এই ইতিহাস প্রসিদ্ধ রেস্তোরা-বারের মদের বিক্রি ৯০ দিনের জন্য বন্ধ করে দিল আবগারি দফতর। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন বারের মালিক অজয় এডওয়ার্ড (Ajay Edward)। সোমবার সন্ধ্যায় আনুমানিক ৫টা নাগাদ দার্জিলিংয়ের আবগারি দফতর এই বিখ্যাত গ্লেনারিজ বার বন্ধ করে দেয়। আবগারি দফতর কারণ হিসাবে দেখিয়েছে, গ্লেনারিজের কাছে লাইভ মিউজিক্যাল ব্যান্ডের লাইসেন্স ছিল না। যদিও বারের মদের লাইসেন্স বৈধ ছিল।

    গতকাল আবগারি দফতরের ডেপুটি কালেক্টর শরণ্যা বারিক তাঁর দল নিয়ে গ্লেনারিজ বারে হানা দেন এবং রেস্তোরাঁ ও বারের (Live Bar) সমস্ত মদ বাজেয়াপ্ত করা শুরু করেন। বাজেয়াপ্ত হওয়া সমস্ত মদ গ্লেনারিজের স্টোর রুমে নিয়ে গিয়ে আবগারি দফতর সিল করে দেয়।

    আদালতে যাওয়ার হুমকি মালিকের

    গ্লেনারিজের মালিক অজয় এডওয়ার্ড যখন রাজনীতিতে আসেন এবং নিজের রাজনৈতিক দল গঠন করেন, তখন তিনি পুরোপুরি তাতে মনোনিবেশ করেন এবং তাঁর স্ত্রী গ্লেনারিজের দায়িত্ব সামলান।

    রবিবার অজয় এডওয়ার্ড এবং তাঁর দল ধোতিয়ায় গোর্খাল্যান্ড ব্রিজ উদ্বোধন করেছিলেন এবং সেখানে 'উই ওয়ান্ট গোর্খাল্যান্ড' (We Want Gorkhaland) স্লোগান শোনা গিয়েছিল। আর এর ঠিক পরের দিন সন্ধ্যায় আবগারি দফতর গ্লেনারিজ বারে হানা দেয় এবং মদের বিক্রি বন্ধ করে দেয়।

    এই বিষয়ে অজয় এডওয়ার্ডের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানান যে তিনি কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, 'এটি পুরোপুরি রাজনৈতিক কারণে হয়েছে, তবে আমি সামাজিক কাজ চালিয়ে যাব এবং এর জন্য আমি আদালতে যাব।'

    ২৫০ কর্মীর পরিবারে অনিশ্চয়তা

    বিশ্ববিখ্যাত গ্লেনারিজের তিনটি বিভাগ রয়েছে: গ্রাউন্ড ফ্লোরে লাইভ মিউজিক্যাল বার, মাঝের তলায় বেকারি এবং টপ ফ্লোরে বার কাম রেস্টুরেন্ট। পর্যটন মরসুমে গ্লেনারিজ সবসময় পূর্ণ থাকে এবং পর্যটকরা সব বিভাগেই সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করেন। দার্জিলিং ভ্রমণে আসা প্রায় ৯০% পর্যটক গ্লেনারিজ পরিদর্শন করেন, এবং বেশিরভাগ পর্যটকই গ্লেনারিজকে পটভূমিতে রেখে ছবি তোলার জন্য বাইরে লাইন দেন।

    এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫০ জন কর্মী কাজ করেন, যাঁরা সকলেই দার্জিলিং পাহাড়ের বাসিন্দা— রাঁধুনি থেকে ক্লিনিং স্টাফ পর্যন্ত। এটাই এই অঞ্চলের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে কর্মীদের পিএফ (PF) এবং অবসর গ্রহণের পর পেনশনের ব্যবস্থা রয়েছে।

    গ্লেনারিজের ম্যানেজার অশোক প্রধান জানান, 'গতকাল প্রায় ৫টা নাগাদ রেইড হয়েছিল এবং তারা আমাদের স্টোররুমে সমস্ত মদ সিল করে দিয়েছেন। আমরা এখানে ২৫০ জন কর্মী, আর আমাদের পরিবার এখানেই কাজ করে চলে। ক্রিসমাস ও নতুন বছরের মরসুম আসছে, এবং এই সময় পর্যটকরা এখানে আনন্দ করতে আসেন। এমন সময় ৯০ দিনের জন্য মদের বিক্রি বন্ধ হয়ে গেল।'

    অশোক প্রধান আরও বলেন, 'আমরা বারের লাইসেন্স পেয়েছি। লাইভ মিউজিক্যাল ব্যান্ডের জন্য আমরা এ বছরের শুরুতে দার্জিলিংয়ের এসপি-কে চিঠি দিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি আবগারি দফতরে দেননি।'

    আবগারি দফতরের বক্তব্য


    অন্যদিকে, আবগারি ডেপুটি কালেক্টর জানান, '২৩৯ ধারা অনুযায়ী আমরা গ্লেনারিজের বার ৯০ দিনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছি, এবং আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল যে বারে লাইভ মিউজিকের লাইসেন্স তাদের কাছে নেই।'

    মালিক অজয় বলেন, 'ওরা বলছে পানশালায় যেখানে গান হয় সেখানকার লাইসেন্স ভ্যালিড নয়। আমার ম্যানেজার আগেই জমা দিয়েছিল। আগের এসপি যিনি ছিলেন তিনি কিছু বলেননি। কিন্তু নতুন যিনি এসপি হয়ে এসেছেন উনি বন্ধ করতে বলেছেন।'

    এখানে উল্লেখ্য, গ্লেনারিজ-এর মালিক জিটিএর বিরোধী সভাসদ অজয় এডওয়ার্ড। বর্তমানে তিনি বাইরে রয়েছেন। তবে ভরা মরশুমে এভাবে জনপ্রিয় নাইট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে মন খারাপ পর্যটকদের।

     

     

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)