অর্ণবাংশু নিয়োগী: রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া (West Benga Primary Teacher Recruitment 2025) ঘিরে ফের এক গুরুত্বপূর্ণ আইনি রায় দিয়েছেন আদালত। ২০২৫ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ২৩-২৫ ডি.এল.এড (D.El.Ed) ব্যাচের প্রার্থীরা অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন কি না, তা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে (High Court Of Calcutta) দীর্ঘ সওয়াল-জবাব শেষ হয়েছিল কিছুদিন আগেই। বিচারপতি বিভাস পট্টনায়কের (Justice Bibhas Pattanayak) এজলাসে এই মামলার শুনানি সম্পন্ন হওয়ার পর অর্ডার ‘রিজার্ভ’ রাখা হয়েছিল। হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর নজর ছিল আদালতের চূড়ান্ত রায়ের দিকে। আদালত জানাল, ২০২৫ এর সেপ্টেম্বরের প্রাথমিকের নিয়োগের মামলা খারিজ করলেন বিচারপতি বিভাস পট্টনায়ক। আবেদনকারীর দাবি ছিল ২০২৩ এবং ২০২৫ এর ডি এল এড দের এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে দিতে হবে। তাই বিজ্ঞপ্তিকে খারিজ করুক কলকাতা হাইকোর্ট।
আদালতের শুনানিতে উঠে আসা মূল বিষয়সমূহ
কলকাতা হাই কোর্টের ১৪ নম্বর কোর্টে এই মামলার শুনানি চলে। একদিকে ছিলেন ২৩-২৫ শিক্ষাবর্ষের ডি.এল.এড প্রার্থীরা, যারা আসন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে ছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং ২০২২ সালের টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীদের একাংশ, যারা এর বিরোধিতা করেছেন।
মামলাকারীদের পক্ষে সওয়াল ও যুক্তি
মামলাকারীদের হয়ে আইনজীবী সাবির আহমেদ একাধিক জোরালো যুক্তি পেশ করেন। তাঁর বক্তব্যের মূল নির্যাস ছিল:
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিত: রাজস্থান হাই কোর্টের প্রসঙ্গ টেনে তিনি যুক্তি দেন যে, বি.এড ডিগ্রি বাতিলের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশটি ‘প্রস্পেক্টিভ এফেক্ট’ অর্থাৎ ভবিষ্যতের জন্য প্রযোজ্য হওয়া উচিত, অতীতের জন্য নয়।
টেট সার্টিফিকেটের বৈধতা: যখন মামলাকারীরা টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, তখন বি.এড ডিগ্রি বৈধ ছিল। বর্তমানে তাঁরা ডি.এল.এড যোগ্যতাও অর্জন করেছেন। তাই তাঁদের অর্জিত টেট সার্টিফিকেট বাতিল করা অযৌক্তিক।
পূর্ববর্তী উদাহরণ: ‘টেস্ট প্রকাশ পাঠক’ এবং এমবিবিএস পরীক্ষার উদাহরণ দিয়ে তিনি ‘পারসুয়িং’ (Pursuing) বা পাঠরত প্রার্থীদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন।
সমতা বজায় রাখা: ২০-২২ ব্যাচ যদি সুযোগ পায়, তবে ২৩-২৫ ব্যাচ কেন বঞ্চিত হবে? বিশেষ করে যখন তাঁদের কোর্স শেষ এবং তাঁরা কেবল ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছেন।
পর্ষদ ও বিপক্ষের পাল্টা যুক্তি
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের হয়ে আইনজীবী সুবীর স্যানাল এবং বিপক্ষের আইনজীবীরা মামলাকারীদের দাবির বিরোধিতা করে বলেন:
কোভিড পরিস্থিতির বিশেষ ছাড়: পর্ষদের মতে, ২০-২২ ব্যাচকে সুপ্রিম কোর্ট কোভিডের কারণে উদ্ভূত এক বিশেষ পরিস্থিতিতে (Peculiar situation) ছাড় দিয়েছিল। সেই পরিস্থিতি ২৩-২৫ ব্যাচের জন্য প্রযোজ্য নয়।
প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও সময়সীমা: নিয়োগের নোটিফিকেশনে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে যোগ্যতা অর্জন করার বিষয়টি একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। সেই নিয়ম মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলা উচিত।
টেট বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন: মামলা চলাকালীন টেট সার্টিফিকেটের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
এজলাসে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ও অন্যান্য পর্যবেক্ষণ
শুনানি চলাকালীন আদালতের পরিবেশ বেশ কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আইনজীবী ফিরদৌস শামিম উপস্থিত হয়ে পর্ষদের আইনজীবীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললে দুই পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। অন্যদিকে, আইনজীবী চতুর্বেদী বিপক্ষের যুক্তিকে সমর্থন জানিয়ে ঝাড়খণ্ড টেট মামলার উদাহরণ পেশ করেন।