ওড়িশার মালকানগিরিতে ১৫০টি বাঙালি বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন, আদিবাসী মহিলা খুনে তীব্র উত্তেজনা, জারি হল কার্ফু
বর্তমান | ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
ভুবনেশ্বর: এক আদিবাসী মহিলা খুন। আর তার জেরেই বেছে বেছে বাঙালিদের উপর হামলা। একের পর এক বাড়িতে চলল ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ। উত্তপ্ত হয়ে উঠল ওড়িশার মালকানগিরির মারিওয়াডা পঞ্চায়েত এলাকা। পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ হামলা চালায় বাঙালি গ্রাম এমভি-২৬ এর উপর। ওই এলাকার বেশিরভাগ মানুষই পূর্ব পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তু বাঙালি হিন্দু। অন্তত ১৫০টি বাড়ি ও ১০০টি দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ঘটনার পর থেকে এমভি-২৬ গ্রামের অন্তত ১ হাজার বাসিন্দা এলাকা ছেড়েছেন বলে সূত্রের খবর। মঙ্গলবারও থমথমে গোটা এলাকা। জারি রয়েছে কার্ফিউ। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতা মহিলার নাম লেক পদিয়ামি (৫৫)। কোয়া উপজাতির ওই মহিলার বাড়ি কোরুকোন্ডা থানার রাখেলগুড়া এলাকায়। গত বুধবার থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। লেকের ছেলে রবি পদিয়ামী থানায় নিখোঁজ অভিযোগ দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার পোতেরু নদীতে তার মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার হয়। রবিবার ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সুকুমার মণ্ডল (৪৫) নামের এক বাঙালিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি এমভি-২৬ এর বাসিন্দা। জানা যাচ্ছে, লেকের জমিতে এক দশকের বেশি সময় ধরে ভাগচাষি হিসেবে কাজ করতেন অভিযুক্ত। সম্প্রতি সেই ভাগচাষ বাতিল করতে চেয়েছিলেন ওই মহিলা। তারপর থেকেই দু’পক্ষের মধ্যে অশান্তি তৈরি হয়েছিল। কোরুকোন্ডার আইআইসি হিমাংশু শেখর বারিক জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে জমি সংক্রান্ত বিবাদের কারণেই ওই মহিলাকে খুন করা হয়েছে।
সুকুমারের গ্রেফতারির পরেই সন্ধেয় কুঠার, তীর-ধনুক হাতে বাঙালি অধ্যুষিত গ্রামটির উপর হামলা চালায় প্রায় ৫ হাজার মানুষ। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় একের পর এক বাড়ি, দোকান ও গাড়িতে। মহানন্দী বৈরাগী নামের ওই এলাকার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, বেছে বেছে বাঙালিদের উপরই হামলা করা হয়েছে। হামলার আভাস আগেই পাওয়া গিয়েছিল। এখনও নিজেদের নিরাপদ বলে মনে করছি না। আমারা আগের মতোই শান্তিপূর্ণভাবে এখানে থাকতে চাই।’
ঘটনাস্থলে গিয়েছেন, কালেক্টর সোমেশ কুমার উপাধ্যায় ও এসপি বিনোদ পাতিল। এসপি জানিয়েছেন, এলাকায় মোতায়েন রয়েছে পুলিশ ও বিএসএফ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলেও জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। দুই সম্প্রদায়ের সঙ্গে শান্তি বৈঠক করেছেন ডিআইজি (দক্ষিণ পশ্চিম) কানওয়ার বিশাল সিং, কালেক্টর, এসপি সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। অন্যদিকে মৃতের পরিবার ময়নাতদন্তে রাজি না হওয়ায় এখনও দেহটি জেলা হাসপাতালের মর্গেই পড়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি মৃতের মুণ্ড এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তার খোঁজে তল্লাশি জারি রয়েছে।