• বন্দেভারত পুরো গাওয়া হলে দেশভাগ হত না, আজব যুক্তি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের, কোনওদিন ওই মন্ত্র উচ্চারণ করেছেন, পালটা খাড়্গে
    বর্তমান | ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি ও কোচবিহার: দেশভাগ না হওয়ার একটাই দাওয়াই ছিল। বন্দেমাতরম গানকে সম্পূর্ণরূপে গাওয়া। এই তত্ত্ব অমিত শাহের। মঙ্গলবার রাজ্যসভায় ছিল বন্দেমাতরমের ১৫০ বর্ষপূর্তি নিয়ে আলোচনা। সেখানেই অমিত শাহ বললেন, বন্দেমাতরম গানকে দ্বিখন্ডিত করেছেন জওহরলাল নেহরু। আর সেই কারণেই দেশভাগ হয়েছে। যদি মুসলিম লিগের সেই চাপের কাছে কংগ্রেস নতি স্বীকার না করে বন্দেমাতরম গানের পূর্ণাঙ্গ রূপই রেখে দিত, তাহলে দেশভাগই হত না। যথারীতি এই বক্তব্যের প্রতিবাদে ফেটে পড়ে কংগ্রেস। 

    অমিত শাহকে প্রত্যাঘাত করেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে। তিনি রাজ্যসভায় বিজেপিকে পালটা প্রশ্ন করেন, বন্দেমাতরম কাদের রাজনৈতিক মন্ত্র ছিল? কারা এই মন্ত্রকে বাছাই করেছে স্বাধীনতা সংগ্রামে? ভারতের জাতীয় কংগ্রেস। বিজেপি নিজেদের সভা সমাবেশে কবে বন্দেমাতরম গান করেছে? আমরা বিগত ৬০ বছর ধরে বন্দেমাতরম ধ্বনি তুলছি। আপনারা যে এখন এটি করছেন, সেটিই বন্দেমাতরম মন্ত্রের সাফল্য। বন্দেমাতরম নিয়ে আলোচনায় এদিন প্রসঙ্গক্রমে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, চীন, দলিতের মতো সাম্প্রতিক যাবতীয় ইস্যু টেনে এনেছেন কংগ্রেস সাংসদ। বিজেপি সাংসদদের তীব্র বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে খাড়্গেকে। রাজ্যসভার নেতা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কিংবা দেশের অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। বন্দেমাতরম নিয়ে আলোচনায় এসব অপ্রাসঙ্গিক অংশ রাজ্যসভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হোক। একই নির্দেশ দেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান সিপি রাধাকৃষ্ণন। এতে আরও তেড়েফুঁড়ে ওঠে বিরোধীরা। 

    কংগ্রেস সহ বিরোধী দলের সাংসদরা তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ফলে রাজ্যসভায় তুলকালাম হয়। ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দিতে থাকে কংগ্রেস। এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন, কংগ্রেস সাংসদরা বলতে থাকেন, ‘ভাগো মৎ’। সবমিলিয়ে চরম নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। খাড়্গে বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজেপি, আরএসএসের কোনও ভূমিকা নেই। এক ফোঁটা রক্তও ঝরেনি। ওরা উড়ে এসে বসেছে। বিজেপি শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। মঙ্গলবার রাজ্যসভায় খাড়্গেও দাবি করেছেন, বাংলায় ভোটের কারণেই সংসদে বন্দেমাতরম নিয়ে আলোচনায় সায় দিয়েছে সরকার পক্ষ। এদিন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অভিযোগ করেছেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকেও এরা অপমান করতে ছাড়েনি। প্রধানমন্ত্রীর দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। 

    এদিকে, এদিন বঙ্কিমচন্দ্র প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপি নেতাদের জিজ্ঞাসা করুন। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ওরা কোথায় ছিল? বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বললেন বঙ্কিমদা? যেন মনে হচ্ছে হরিদা, শ্যামদা? বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, যিনি ন্যাশনাল সং রচনা করেছিলেন তাঁকে এইটুকু সম্মান দিলেন না? আপনাদের তো মাথা নীচু করে নাকে খত দেওয়া উচিত জনগণের কাছে। তাতেও ক্ষমা হবে না। আপনারা অসম্মান করেছেন দেশের ইতিহাসকে, দেশের  সংস্কৃতিকে, দেশের আন্দোলনকে। রাজা রামমোহন রায়কে বলে দিলেন, তিনি নাকি দেশপ্রেমিক নন! ক্ষুদিরামকে বলে দিলেন, সন্ত্রাসবাদী! বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙলেন? নির্বাচনের সময় সংখ্যালঘু ভোট কাটার চেষ্টা করছেন কোটি কোটি টাকা খরচ করছেন। আর অন্য সময় নাম বাদ দাও, শীতলকুচিতে গুলি করে মারো। ভুলে গেছেন সব? অন্যদিকে, বঙ্কিমচন্দ্রের অপমানের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ সভা করল তৃণমূল কংগ্রেস। চুঁচুড়ার বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত বন্দেমাতরম ভবনের সামনে মঙ্গলবার চুঁচুড়া শহর তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে ওই বিক্ষোভ সভা হয়। বিভিন্ন জেলাতেও বিক্ষোভ হয়।
  • Link to this news (বর্তমান)