একটা এফআইআরে প্রমাণ হয় না বাংলায় বিএলওরা বিপন্ন, কমিশনকে সুপ্রিম কোর্ট
বর্তমান | ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ‘মাত্র একটা এফআইআরকে অস্ত্র করে কি বলতে পারেন গোটা রাজ্যে বিএলওরা বিপন্ন?’ সুপ্রিম কোর্টে এমনই কড়া প্রশ্নের মুখে পড়ল নির্বাচন কমিশন। ভোটার তালিকা শুদ্ধকরণের কাজে বাংলায় বিএলওরা রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ছেন—এই সংক্রান্ত এক মামলায় মঙ্গলবার দেশের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হল কমিশনকে।
মামলাটি করেছিল সনাতনী সংসদ নামক একটি সংগঠন। দাবি ছিল, বিএলওদের সুরক্ষায় এসআইআরের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত রাজ্য পুলিশের একাংশকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে নেওয়া হোক। তারই শুনানিতে কমিশনের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে বিএলওদের উপর কয়েকটি রাজনৈতিক দল চাপ দিচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ পর্যাপ্ত সাহায্য করছে না।’ তখন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, ‘আবেদনে একটিমাত্র এফআইআরের উল্লেখ আছে। বাকি অনুমান নির্ভর। ফলে তার উপর ভিত্তি করে কি বলা যায় যে, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি এমনই আলাদা যে শুধুমাত্র এই রাজ্যের জন্য বিশেষ নির্দেশ দিতে হবে? নির্বাচন প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু না হলে পুলিশ যে কমিশনের অধীনে আসে না, সেটা নিশ্চয় জানেন? রাজ্যের কাছে সাহায্য চান, যদি না করে তখন আমাদের কাছে আসবেন।’ তবে নির্বাচন কমিশন এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নোটিস ইস্যু করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
রাকেশ দ্বিবেদী আদালতে বলেন, ‘বুথ পিছু ভোটারের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছিল দেড় হাজার। হয়েছে ১,২০০। ফলে বিএলওদের কাজ বলতে গড়ে দৈনিক ৩৫ জন ভোটার যাচাই। এটা চাপের নয়।’ একথা শুনেই বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘এ মোটেই ঘরে বসে ডেস্ক ওয়ার্ক নয়। বিএলওদের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে যাচাই করতে হচ্ছে। ফর্ম দিতে হচ্ছে। নিতে হচ্ছে। আপলোড করতে হচ্ছে। এটাই চাপ।’
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে মতুয়াদের একাংশের নাম কীভাবে ভোটার তালিকায় উঠবে, তা নিয়েও ছিল শুনানি। এসআইআর সংক্রান্ত একইসঙ্গে একই বেঞ্চে ২৪টি মামলার শুনানি হচ্ছে। সেখানেই মতুয়া ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, ‘আগে তো আপনারা দেশের নাগরিকত্ব পান, তারপর ভোটার হবেন। নাগরিকরাই ভোট দিতে পারেন। আপনারা নাগরিক কি না, তা ঠিক করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের নয়। আদালতেরও নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের। তাছাড়া কোনও ভুক্তভোগী আদালতে আসেনি কেন? কেন সংগঠন?’ আবেদনকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আত্মদীপের আইনজীবী করুণা নন্দী বলেন, ‘সিটিজেনশিপ সংশোধনী আইনে আবেদন দীর্ঘদিন পড়ে রয়েছে। এদিকে এসআইআর হয়ে যাচ্ছে। ২০২৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে। তাই তার আগে মতুয়াদের বিষয়টি নিষ্পত্তি হোক।’ যদিও শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, ‘আগে নাগরিক হতে হবে, তারপর ভোটার। ঘোড়ার আগে কি এক্কাগাড়ি জুড়ে দেওয়া সম্ভব?’ আগামী ১৭ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানি।