চকোলেটের জন্য রাজ্যে এই প্রথম কোকো চাষ, জলপাইগুড়ির ফার্মে মিলছে চারাগাছ
বর্তমান | ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: চায়ের জেলা জলপাইগুড়িতে এবার কফি চাষ। সেইসঙ্গে চকোলেটের জন্য উৎপাদন করা হচ্ছে কোকো। বেশ কয়েকবছর ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এ ব্যাপারে সফল হয়েছে কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা। মোহিনগরে তাদের ফার্মে বিশাল এলাকাজুড়ে অন্তত ১৫ প্রজাতির কোকোর চাষ চলছে। বর্তমানে গাছে গাছে ঝুলছে কোকো ফল। কোনওটি বেগুনি, কোনওটি হলুদ, কোনওটি আবার সবুজ। এর বিনস থেকে তৈরি হয় চকোলেট। বিনসের ভিতরে থাকা পাউডার ব্যবহৃত হয় চকোলেটে রং আনার কাজে।
রাজ্যের মধ্যে প্রথম জলপাইগুড়িতেই কোকো চাষ শুরু হয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় রোপণ ফসল অনুসন্ধান সংস্থার মোহিতনগর সেন্টারের ইনচার্জ অরুণকুমার শিটের। জলপাইগুড়িতে কোকো চাষ শুরু হতেই উত্তরবঙ্গে চকোলেট কোম্পানি বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উত্তরবঙ্গেও কোকো চাষের মধ্যে দিয়ে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন বলে দাবি অরুণবাবুর। সুপারি বাগানে খুব ভালোভাবে কোকো চাষ হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে চায়ের জেলা জলপাইগুড়িতে কফি চাষও যে খুব ভালো হতে পারে, তা মোহিতনগরের ফার্মে হাতেকলমে করে দেখিয়েছে ওই কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা।
কর্ণাটকের ভিত্তালে অবস্থিত সেন্ট্রাল প্ল্যান্টেশন ক্রপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে বর্তমানে ১৭৫ ধরনের কোকোর প্রজাতি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। সেখান থেকেই ১৫টি প্রজাতি নিয়ে আসা হয়েছিল জলপাইগুড়ির ফার্মে। বেশ কয়েক বছর ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জলপাইগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের জলবায়ু ও মাটিতে কোকোর তিনটি প্রজাতি (ভিটিএল-সিএইচ-১, ২ ও ৪) ভালো ফলন দিতে পারে বলে সুপারিশ কৃষি বিজ্ঞানীদের। তাঁদের দাবি, জলপাইগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গে প্রচুর সুপারি বাগান রয়েছে। নিয়ম মেনে সুপারি গাছ লাগালে একই জমিতে গোলমরিচের সঙ্গে কোকো চাষ করা যেতে পারে।
কোকো গাছ লাগানোর তিনবছর পর থেকে ফুল আসতে শুরু করে। তবে কোকো বাজারজাত করার জন্য আরও দু’বছর অপেক্ষা করতে হবে। এক একর জমিতে মোটামুটি ২৭০টির মতো কোকো গাছ লাগানো যেতে পারে। প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে দু’কেজি শুকনো কোকো বিনস পাওয়া যায়। যার প্রতি কেজির পাইকারি দর দু’শো টাকা।
মোহিতনগরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় রোপণ ফসল অনুসন্ধান সংস্থার ইনচার্জ বলেন, উৎসাহী কৃষকরা চাইলে আমাদের কাছ থেকে কোকো ও কফি চারা পাবেন। বীজ থেকে তৈরি চারার পাশাপাশি আমাদের কাছে কোকোর গ্রাফটিং করা চারা রয়েছে। চিরাচরিত ফসল চাষের পরিবর্তে নতুন ফসল হিসেবে কোকো চাষ যথেষ্ট লাভজনক। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, একই জমিতে কৃষক সুপারি, গোলমরিচ এবং কোকো একসঙ্গে চাষ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ৯ ফুট বাই ৯ ফুট দূরত্বে সুপারি গাছ লাগাতে হবে। এবং ৯ ফুট বাই ১৮ ফুট দূরত্বে রোপণ করতে হবে কোকো গাছ। জমির চারপাশ দিয়ে বেড়া ফসল হিসেবে কফি গাছ লাগাতে পারেন কৃষক।