দলমায় ফিরতি পথে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হাতির পাল, আতঙ্কে বাঁকুড়ার কৃষকরা
বর্তমান | ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: দলমায় ফিরে যাওয়ার পথে হাতির দল ভাগ হয়ে বাঁকুড়ার জঙ্গলে ছড়িয়ে পড়েছে। ৬০টি হাতি বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের একাধিক বিট এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। বর্তমানে মাঠে ধান সহ অন্যান্য ফসল রয়েছে। হাতির হানায় ফসল নষ্টের আশঙ্কায় চাষিদের মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে। বনদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার বড়জোড়া রেঞ্জের সাহারজোড়ায় পাঁচটি, উত্তর সরাগোড়ায় ১৮টি, পাবয়ায় ১০টি এবং শিউলিবনে ২৭টি হাতি রয়েছে। ওইসব জায়গা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দাদের বনদপ্তরের তরফে সতর্ক করা হয়।
বাঁকুড়া উত্তরের ডিএফও জে শেখ ফরিদ বলেন, হাতির দলে ১৫ দিনের একটি শাবক রয়েছে। বাকি কয়েকটি ছোট হাতি ওই দলে রয়েছে। বড়জোড়া তথা বাঁকুড়া ছেড়ে হাতির দলটি দলমায় ফিরে যেতে চাইছে। বড়দের সঙ্গে শাবকরা যেতে না পারার কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা হাতির পালকে সরানোর চেষ্টায় কোনও খামতি রাখছি না। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাতিগুলি যাতে লোকালয়ে না ঢুকে পড়ে, তারজন্য বনকর্মীদের নিয়ে আমরা দলের উপর নজর রাখছি। আপাতত জঙ্গলপথ ধরে হাতিগুলি যাচ্ছে। ফলে এখনও পর্যন্ত ফসলের ক্ষতি তেমন হয়নি।
উল্লেখ্য, বাঁকুড়ায় দীর্ঘদিন ধরেই হাতির আনাগোনা রয়েছে। হাতির দৌরাত্ম্যে বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে। চাষিরা ফসল ফলিয়েও গোলায় তুলতে পারেন না। শেষ মুহূর্তে খেত-খামারে হাতির পাল ফসল নষ্ট করে দেয়। মাঠে হাতি পায়ে মাড়িয়ে ধান, সব্জি নষ্ট করে দেয়। কোনও কারণে তা ঘরে আনলেও দেওয়াল বা পাঁচিল ভেঙে হাতি ধান ‘লুট’ করে খেয়ে নেয়। এই পরিস্থিতিতে হাতি তাড়ানোর জন্য বারবার স্থানীয়রা বনদপ্তরের কাছে আবেদন জানান। কিন্তু, তাঁদের কথায় কেউ কর্ণপাত করেনি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে জেলার জনপ্রতিনিধিদের একাংশ বনমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন। তাঁরা সমস্যার কথা মন্ত্রীকে জানান। কিন্তু, তারপরেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। এবার অবশ্য হাতির পাল ‘স্বেচ্ছায়’ দলমার রাস্তা ধরেছে।
বড়জোড়া ব্লকের বাসিন্দা কল্পনা সরকার, শুভ্রাংশু মুখোপাধ্যায় বলেন, হাতির হানায় প্রতিবারই বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগ এলাকায় ফসল ও সম্পত্তি নষ্ট হয়। এবারও হাতির পালটি যখন বড়জোড়ায় আসে, তখন বেলিয়াতোড় ও আশাপাশের এলাকায় ফসল নষ্ট হয়েছে। বনদপ্তর তথা সরকার হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধান করলে ভালো হয়।
বনদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, হাতির পাল খাবারের জন্যই যত্রতত্র ঘুরে বেড়ায়। সাময়িকভাবে হুলাপার্টির সাহায্যে হাতি তাড়ানো সম্ভব। কিন্তু হাতি যদি কোনও এলাকায় যাব মনে করে, তবে সেখান থেকে তাদের বেশিদিন দূরে রাখা যায় না। বহুদিন পর বড়জোড়ার জঙ্গল ছেড়ে হাতিগুলি নিজেদের স্থায়ী ডেরার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আশা করা যায়, তারা নিজেদের রুট ধরেই যাবে। নিজস্ব চিত্র