হলদিয়া-নন্দীগ্রামে বাতিল প্রায় ২৬ হাজার ভোটার, শোরগোল
বর্তমান | ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশনে(এসআইআর) শুধুমাত্র হলদিয়া ও নন্দীগ্রাম বিধানসভায় ২৫হাজার ৮৪৮ভোটারের নাম বাদ গেল। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলদিয়াতেই ৫.৭৩শতাংশ নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ল। নন্দীগ্রাম বিধানসভায় তালিকা থেকে ৩.৭৯শতাংশ ভোটারের নাম বাদ। ফি-বছর ভোটার তালিকা সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজন সত্ত্বেও ওই দুই গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভায় ২৫হাজারের বেশি ভূতুড়ে ভোটার ছিল। এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এককালীন সেইসব ভোটারের নাম বাদ পড়ল। দুই কেন্দ্রে অসংখ্য মৃত ভোটারের পাশাপাশি হদিশ না থাকা ৪১১৩ভোটার এবং দু’জায়গায় নাম থাকা আরও ১০৪জনের খোঁজ মিলেছে। প্রত্যেকের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
হলদিয়া বিধানসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২লক্ষ ৬৬হাজার ৯৪৩। তার মধ্যে বিএলওরা মোট ২লক্ষ ৬৬হাজার ৯২৫জনের ইনিউমারেশন ফর্ম পৌঁছে দিয়েছিলেন। ডিজিটাইজেশনের পর দেখা যাচ্ছে, হলদিয়া বিধানসভায় মৃত ভোটারের সংখ্যা ৫৯৮৭জন। ৩০০২জন ভোটারের কোনও হদিশ পাননি বিএলও। তাঁদের কাছ থেকে পূরণ হওয়া ফর্ম আসেনি। সরকারি খাতায় তাঁরা ‘অ্যাবসেন্ট’। এছাড়াও, স্থানান্তরিত হয়ে অন্যত্র ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন আরও ৬২৩৯জন। বিয়ের পর মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি এলাকার ভোটার তালিকায় নাম তোলেন। তাঁদের অনেকেই বাপেরবাড়ি এলাকার বুথে নাম কাটেননি। সেজন্য এসআইআরে ‘শিফ্টিং’ হিসেবে বিপুল সংখ্যক ভোটারের নাম বাদ পড়ছে। অনেক পরিবার গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে চলে আসছে। সেইসব পরিবারও ভোটার তালিকায় শিফ্টিং হিসেবে নাম তোলার সময় আগের বুথ থেকে নাম কাটায়নি। হলদিয়া বিধানসভায় ডুপ্লিকেট ভোটারের সংখ্যা ৬৭জন। সবমিলিয়ে বাদ পড়েছেন ১৫হাজার ২৯৫জন। এটিই গোটা জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ।
নন্দীগ্রাম বিধানসভায় মোট ২লক্ষ ৭৮হাজার ২১২ভোটার। মোট ২লক্ষ ৭৮হাজার ২০৮টি ইনিউমারেশন ফর্ম বিলি হয়। যদিও নন্দীগ্রাম বিধানসভায় মৃত ৪৫২৯জন ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। কোনও খোঁজ না থাকা ভোটারের সংখ্যা ১১১১জন।
এছাড়াও, শিফ্টিং হিসেবে আরও ৪৮৭৬জনের নাম বাদ। ডুপ্লিকেট হিসেবে বাদ পড়ছে ৩৭জনের নাম। নন্দীগ্রাম বিধানসভায় ডুপ্লিকেট, অন্যজনকে অভিভাবক দেখিয়ে তালিকায় নাম তোলা সহ বেশকিছু অভিযোগ কমিশনে জমা পড়েছে। তার প্রেক্ষিতে সোমবার কমিশন নিযুক্ত পর্যবেক্ষক নীলম মীনা নন্দীগ্রাম-১ বিডিও অফিসে বসে ২০-২৫জন বিএলওর মুখোমুখি হন। তাঁরা কীভাবে এসআইআরের কাজ সম্পন্ন করেছেন, তা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্দিষ্ট গাইডলাইন অনুযায়ী ভোটার তালিকা সংশোধন করার নির্দেশ দিত। সেই কাজে নেমে বিএলওরা শাসক দলের চাপে ভুয়ো ভোটারদের নাম বাদ দিতে পারতেন না। ইচ্ছে থাকলেও তাঁরা চাপের মুখে ওই কাজ করতে বাধার সম্মুখীন হতেন। যেকারণে ৮-১০ বছর আগে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের নামও তালিকায় থেকে গিয়েছিল। জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ নির্বাচন কমিশন করে। এই কাজে আমাদের পার্টিকে জড়িয়ে বিজেপি মিথ্যাচারের রাজনীতি করছে।