নিজস্ব, প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: বেলপাহাড়ীর অন্যতম পর্যটনস্থল ঘাগড়া জলপ্রপাত। নীলকর সাহেব ফ্রেডরিক রাইজ বারোজ প্রথম এই জলপ্রপাতের সন্ধান পান। পরবর্তীতে বনভোজনস্থল হিসেবে নীলকর সাহেবদের কাছে জায়গাটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ সাহেবরাও বেড়াতে আসতে শুরু করেন। সেদিনের সেই রূপসী ঘাগড়ার আকর্ষণ আজও কমেনি।
বিনপুর-২ ব্লকের ভুলাভেদা এলাকার পাটাঘর ও বরাহপাল গ্ৰামের মধ্যবর্তী পাহাড়ী উপত্যকা থেকে তারাফেনী নদীর উৎপত্তি হয়েছে। এরপর নদীটি সেখান থেকে পাহাড়ী রাস্তা ধরে ঘাগড়া গ্ৰাম দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর জলস্রোতে পাথুরে ভূমি ক্ষয়ে গিয়ে জলপ্রপাত বা কলসির আকৃতির ভূমিরূপ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় আদিবাসীদের উচ্চারণে জায়গাটির নাম ছিল গাগরা। যার অর্থ জলভর্তি ধাতব পাত্র বা কলস। ব্রিটিশ শাসনকাল থেকে ঝাড়গ্রামের জঙ্গল ও পাহাড় অধ্যুষিত এলাকায় নীলকর সাহেবদের আসা শুরু হয়। ১৮৬০ সালে নীলবিদ্রোহের পর পাবনা, যশোরের পাশাপাশি নদীয়া, মুর্শিদাবাদ সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে নীলচাষ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। নীল তৈরির ব্যবসা জঙ্গলমহল ও বিহারের দিকে সরিয়ে আনা হয়। ১৮৮১ সালের সরকারি জার্নাল ইম্পেরিয়াল গেজিটিয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ১৮৭৭ সালে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ী, শিলদা, রামগড়, লালগড়, মানিকপাড়া, সরডিহা, চন্দ্রকোণা এলাকায় ২০ হাজার একর জমিতে নীল চাষ হত। নীলকর ফ্রেডরিক সাহেব এই সময়কালে ঘাগড়া জলপ্রপাতের সন্ধান পান। ঝাড়গ্রামের নীলকর সাহেবদের কাছে ঘাগড়া জলপ্রপাত সেই সময় থেকেই বনভোজন করার অন্যতম জায়গা হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ গেজিটিয়ারে নদী তীরবর্তী এলাকায় সাঁওতাল, মুণ্ডা, লোধা-শবরদের বসবাস করার উল্লেখ রয়েছে।
তারাফেনী নদী তীরবর্তী জমিতে নব্যপ্রস্তর যুগের বহু নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। ঘাগড়া জলপ্রপাতের উত্তরপ্রান্তে ‘মা ঘাগড়াসিনীর থান’ রয়েছে। নদীর বালুচরে মাঘ মাসের ১ তারিখে টুসু মেলা বসে। আদিবাসী ও জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষজন মেলায় ভিড় জমান। বর্তমানে বেলপাহাড়ীর ঘাগড়া জলপ্রপাত জেলার অন্যতম পর্যটনস্থল হয়ে উঠেছে। বেলপাহাড়ীর ইন্দিরাচক থেকে ঘাগড়া গ্ৰামের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। গ্ৰামের কিছুটা দূরেই জলপ্রপাতটি রয়েছে। বর্তমানে ঘাগড়া জলপ্রপাতের কাছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শৌচালয় ও বসার জন্য কংক্রিটের চেয়ার তৈরি হয়েছে। সিভিক ভলান্টিয়াররা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। ঘাগড়া বনসুরক্ষা কমিটির সদস্যরা এলাকায় নজরদারি চালান।ভুলাভেদা গ্ৰামপঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা দশরথ হাঁসদা বলেন, বাপ-ঠাকুরদার মুখে শুনেছি, বহু যুগ আগে থেকে আমরা এখানে বসবাস করছি। মৌখিক লোকগাঁথায় ঘাগড়া জলপ্রপাতের উল্লেখ রয়েছে। আমরা স্থানীয় পাহাড়ের পুজো করি। পর্যটক আসার সংখ্যা এখন দিনদিন বাড়ছে। জলপ্রপাতের কাছে দেবীর থান আছে। সেখানে পবিত্রতা বজায় থাকুক, সেটাই আমরা চাই। ঝাড়গ্রাম জেলা পর্যটন দপ্তরের আধিকারিক বিধান ঘোষ বলেন, বেলপাহাড়ীর পর্যটনস্থলগুলি নিয়ে পর্যটন দপ্তরের তরফে প্রচার চালানো হচ্ছে। বহু পর্যটক এখানে বেড়াতে আসছেন। বনবিভাগের সতর্কতামূলক নির্দেশগুলি তাঁদের মেনে চলতে বলা হচ্ছে।-নিজস্ব চিত্র