নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: কাশ্মীরের ‘কাহওয়া’-তে মজেছে বহরমপুরবাসী। হলদে সোনালী বর্ণের সুগন্ধি উষ্ণ কাহওয়া এখন প্রথম পছন্দের। শীতের সন্ধ্যায় পাতি চা ছেড়ে এই কাহওয়া দিয়ে গলা ভেজাচ্ছেন সকলেই। কাহওয়া আসলে এক ধরনের ‘স্যাফরন টি’। কাশ্মীরের তীব্র শীতে শরীর গরম রাখে এই কেশর চা, যা খেতে সুস্বাদু ও অত্যন্ত আরামদায়ক। এটি মূলত সবুজ চা, কেশর, এলাচ, দারুচিনি ও বাদাম দিয়ে তৈরি এক সুগন্ধি, উষ্ণ পানীয় যা ঠান্ডায় শরীরকে আরাম দেয়। কাশ্মীরিদের আতিথেয়তার অন্যতম প্রতীক এখন বহরমপুরের ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানে হটকেক। কাহওয়া কাশ্মীরের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেই গল্প শুনতে শুনতে গলায় উষ্ণ স্যাফরন টি ঢালছেন যুবক যুবতীরা। বহরমপুরের খাদি মেলায় এই চা খেতে মানুষের ভিড় জমছে।
শ্রীনগর থেকে একটি বিশাল চায়ের কেটলি নিয়ে হাজির হয়েছেন গহ্বর জারগার। মেলায় মাঠের মাঝে একটি ছোট্ট টেবিলে রাখা সুদৃশ্য বিশাল কেটলি। তার মধ্যেই কাঠকয়লা দেওয়ার একটি জায়গা আছে। মাঝে মধ্যে ফুঁ দিয়ে আগুন বাড়িয়ে নিচ্ছেন গহ্বর। আর মুহূর্তের মধ্যে কেটলির নল দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। তখন চায়ের কাপে ঢেলে পরিবেশন করছেন তিনি। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ১৫০-১৭০ কাপ চা বিক্রি করছেন। কোনও কোনও দিন বিক্রির পরিমাণ ২০০ কাপ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় এই চা একবার পান করলেই মানুষের ফের খাওয়ার ইচ্ছে বাড়ছে। অন্যান্য চায়ের মত এই চায়েরও কিছু উপকারিতা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
কাহওয়া অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি হজম ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়া মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে। এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের পক্ষে ভালো। ত্বকের জেল্লা বাড়াতে সাহায্য করে এটি। হার্টকেও ভালো রাখে এই কাশ্মীরি চা। শীতে সর্দি-কাশির হাত থেকে রক্ষা করে এই চা। গহ্বর বলেন, কাশ্মীরে বাড়িতে অতিথি এলে তাঁদের সম্মান দেখাতে এই পানীয় দেওয়া হয়। কাহওয়া পানের অনেক স্বাস্থ্যকর দিক রয়েছে। তবে আমরা মূলত অতুলনীয় স্বাদের জন্য এই চা শ্রীনগর থেকে নিয়ে এসে বহরমপুরের মেলায় বিক্রি করছি। দৈনিক ২০০ থেকে ২২০ কাপ চা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কাপ চায়ের দাম রেখেছি কুড়ি টাকা। অনেকেই একবার খাওয়ার পর ফের এই চা পান করছেন।
বহরমপুরের কলেজ পড়ুয়া শ্রীময়ী দাস বলেন, প্রথম দিন মেলায় এসে সাধারণ চা ভেবেই এটা খেয়েছিলাম। কিন্তু এত অসাধারণ স্বাদ যে, তারপর যতবার মেলায় এসেছি দু’ কাপ করে খেয়েছি। ইউটিউবে ভিডিও দেখেছি, কীভাবে এই চা বাড়িতে বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। উপকরণ কিনে নিয়ে, বাড়িতে বানানোর চেষ্টা করব।
বহরমপুরের অধ্যাপক সমিত মণ্ডল বলেন, কাহওয়া একটি অত্যন্ত সুস্বাদু পানীয়। আমরা যারা বারবার চা পান করি, তাদের জন্য এটা খুবই আকর্ষণের। যদিও দামের দিক থেকে বিলাসবহুল একটা পানীয়। স্যাফরনের নির্যাস এমনভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা খুব সহজেই শরীরকে চাঙ্গা করে দিচ্ছে। শীতের এই আমেজে বহরমপুরের ঐতিহ্যবাহী ব্যারাকে স্কোয়ার ময়দানের খাদি মেলায় এটি অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। নিজস্ব চিত্র