• খাস কলকাতায় বসে দেশজুড়ে ৪০টির বেশি ডিজিটাল অ্যারেস্ট! ৬০০ সিম নিয়ে কারবার, ধৃত ভিয়েতনামি
    বর্তমান | ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কলকাতায় বসে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্টে‘র মাধ্যমে সাধারণকে ঠকিয়ে অর্থ রোজগারের এক আন্তর্জাতিক চক্রের পান্ডা পাকড়াও হল নেতাজিনগর এলাকায়। চক্রের পান্ডা ভিয়েতনামের বাসিন্দা ওই যুবককে অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়া থেকে আসা সিআইডি টিম  সোমবার রাতে নেতাজিনগরের একটি ভাড়া বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে। ধৃত ভিয়েতনামি যুবক হিউ হিউ দোই ওরফে পুই ও তার টিম কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে টার্গেট বাছাই করে কখনও ইডি, কখনও সিবিআই আবার কখনও কাস্টমস আধিকারিক সেজে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্টে’র হুমকি দিয়ে মোটা টাকা আদায় করত। সিম বক্স টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে ভুয়ো টেলিফোন এক্সচেঞ্জ খুলেছিল হিউ। ভিয়েতনাম থেকে আসা আন্তর্জাতিক কলকে স্থানীয় কলে বদলে ফেলে সাইবার প্রতারণার কারবার ফেঁদেছিল এই ভিয়েতনামি। প্রতারণা ব্যবসার মাধ্যমে এই চক্র কোটি কোটি টাকা রোজগার করেছে বলে অভিযোগ। এই চক্রের মাধ্যমে প্রতারিত এক ব্যক্তি গত নভেম্বর মাসে বিজয়ওয়াড়া সিআইডি’র কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তার ভিত্তিতেই তদন্তে নেমেছিল সে রাজ্যের সিআইডি টিম। হিউয়ের কাছ থেকে সিম বক্স এবং ৬০০টি প্রিপেড সিম কার্ড। মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে হাজির করানা হলে, ওই ভিয়েতনামি যুবককে ট্রানজিট রিমান্ডে বিজয়ওয়াড়া নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন বিচারক। অন্ধ্রপ্রদেশ সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, হিউয়ের এই অপরাধ চক্র ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি এবং হ্যানয় থেকে পরিচালিত হলেও, প্রতারক দলের বাকি সদস্যরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে।   

    পুলিশ সূত্রে খবর, হিউ ছ’মাস আগে বৈধ পাসপোর্ট ও ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে ভারতে ঢোকে। প্রথমে দক্ষিণ ভারতে ডেরা বাঁধে। সেখানেও সিম বক্স টেকনোলজি ব্যবহার করে ভুয়ো টেলিফোন এক্সচেঞ্জ খোলে।  ভিয়েতনাম থেকে সাইবার জালিয়াতদের কল আসত ভারতে। সেই কলকে দেশীয় কলে বদলে ফেলে বয়স্ক নাগরিকদের কাছে ট্রান্সফার করে দিতে হিউ। তার বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়ে অন্ধ্রপ্রদেশে সিআইডিতে। সমাজমাধ্যমে ভিয়েতনামি যুবক সম্পর্কে খোঁজখবর শুরু করেন তদন্তকারীরা। সেখান থেকে দেখা যায়, কলকাতার একজনের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব রয়েছে। তার সঙ্গে নিয়মিত কথা হচ্ছে। মোবাইলের আইপি অ্যাড্রেসের সূত্র ধরে কলকাতার ওই বাসিন্দার নম্বর হাতে আসে তদন্তকারীদের। তাঁর সঙ্গে কথা বলে অফিসাররা জানতে পারেন, পেশায় ঠিকাদার ওই ব্যক্তির সঙ্গে মাস তিনেক আগে পরিচয় হয়েছিল হিউয়ের। ভিয়েতনামের ওই নাগরিক তাঁকে জানায়, অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজে সে ভারতে আসছে। অন্য শহরের তুলনায় কলকাতায় থাকাখাওয়ার খরচ যথেষ্ট কম। তাঁকে ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সেইমতো নেতাজিনগর এলাকায় ভাড়া ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন ওই ঠিকাদার। সেই সূত্র ধরেই সোমবার রাতে বিজওয়াড়ার সিআইডি টিম কলকাতায় পৌঁছে নেতাজিনগরের একটি ফ্ল্যাট থেকে ভিয়েতনামের ওই যুবককে গ্রেফতার করে। 

    তদন্তকারীরা বলছেন, এই চক্র ভারতীয় নথি দিয়ে প্রিঅ্যাক্টিভেটেড সিম জোগাড় করে। ওই সিমের ওটিপি যাচ্ছে ভিয়েতনামে। তাই দিয়ে খোলা হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ। একইসঙ্গে বিদেশের কলগুলিকে দেশীয় কলে বদলে ফেলার জন্য খোলা হয় ভুয়ো এক্সচেঞ্জ। নেতাজিনগরে বাড়িতে হিউ তাই করছিল। তদন্তকারীরা বলছেন, প্রবীণ নাগরিক সহ সাধারণ মানুষের নম্বর জোগাড় করে ভিয়েতনামে পাঠানো হতো। সেখান থেকে কল করা হতো ভারতে। যাঁরা কল রিসিভ করতেন, তাঁরা ভারতীয় নম্বরই পেতেন। প্রতারকদের হুমকিতে ভয় পেতেন, টাকা দিতেন। আপাতত হিউ ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল অ্যারেস্টের নামে প্রায় ৫০টি প্রতারণার অভিযোগ মিলেছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)