নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: রাজ্যে এসআইআরের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। ক’দিন পর প্রকাশিত হবে খসড়া ভোটার তালিকা। এই আবহে মানুষের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা বাড়ছে উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায়। এখনও পর্যন্ত সামনে আসা তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গোটা জেলায় ‘নো ম্যাপিং’ ভোটারের সংখ্যা প্রায় সাত লক্ষ। এর অর্থ, এই বিপুল সংখ্যক নাম ২০২৫-এর ভোটার তালিকায় থাকলেও ২০০২ সালের তালিকায় নেই। নেই তাঁদের বাবা-মায়ের নামও। ফলে তাঁদের এবার নোটিশ পাঠিয়ে শুনানিতে ডাকবে কমিশন। স্বভাবতই লক্ষ লক্ষ ভোটার এখন উদ্বেগের প্রহন গুণছেন।
এই জেলায় ইতিমধ্যে ৯৯ শতাংশের বেশি ইনিউমারেশন ফর্ম জমা পড়ে গিয়েছে কমিশনের ওয়েবসাইটে। বাকি থাকা কাজ দ্রুত শেষ করার তোড়জোড় চলছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনায় মোট ভোটারের সংখ্যা ৮৩ লক্ষ ৬৮১ জন। এর মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২৪৩ জন। জেলায় মোট ৮২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৮৬০টি ইনিউমারেশন ফর্ম বিলি হয়েছে। মৃত ভোটারের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৫ হাজার ৬৩। স্থানান্তরিত ভোটার ২ লক্ষ ৪১ হাজার ৪৫৯ জন। অস্তিত্বহীন ভোটার ২ লক্ষ ১১ হাজার ২৮৩। এঁদের কোনও হদিশ পাচ্ছে না প্রশাসন। আর ‘নো ম্যাপিং’ চিহ্নিত হয়েছে ৬ লক্ষ ৮৮ হাজার ২১৬ জন ভোটার। রাজারহাট-গোপালপুর বিধানসভায় মৃত ও স্থানান্তরিত ভোটারের সংখ্যা সর্বাধিক (দু’টি ক্ষেত্রেই ২০ হাজারের বেশি)। মৃত ভোটার সবচেয়ে কম রয়েছে নৈহাটি বিধানসভায়।
বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন জেলা উত্তর ২৪ পরগনা। জেলার বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে রয়েছেন মতুয়া ও উদ্বাস্তু ভোটার। বনগাঁ মহকুমার ৪৫ শতাংশ ভোটারই মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। ‘নো ম্যাপিং’-এর তালিকায় এই মতুয়া ও উদ্বাস্তু অংশের মানুষের নামই বেশি থাকবে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন। কারণ, জেলার নানা প্রান্তে বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষজন স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। অনেকে ২০০২ সালের পরে ভারতে এসে এখানকার ভোটার হয়েছেন। তাঁদেরই এবার শুনানির জন্য নোটিশ পাঠাবে কমিশন। জানা গিয়েছে, সবথেকে বেশি ‘নো-ম্যাপিং’ ভোটার রয়েছেন গাইগাটা বিধানসভা এলাকায়। সংখ্যাটা প্রায় ৩৭ হাজার। তবে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন এখনই কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে এসআইআর সংক্রান্ত তথ্য বা বক্তব্য জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা এড়িয়ে যাচ্ছেন বলেও দাবি বিভিন্ন মহলের। সব মিলিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে মতুয়াগড় বনগাঁ, গাইঘাটা সহ পুরো জেলায়।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, এসআইআরে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন মতুয়া, নমঃশূদ্ররা। খসড়া তালিকা প্রকাশ হলে দেখবেন কয়েক লক্ষ মতুয়ার নাম বাদ গিয়েছে। আমাদের আশঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে।’ পাল্টা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের দাবি, কোনও মতুয়ার নাম বাদ যাবে না। সিএএ’র মাধ্যমে তাঁদের নাগরিকত্ব দিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তুলে দেওয়া হবে।’