নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ফায়ার লাইসেন্স রয়েছে। তবে ছাদের ৫০ শতাংশ ছেড়ে রেস্তোরাঁ চালানোর নিয়ম মানা হয়নি। কোথাও আবার ফায়ার লাইসেন্স ছাড়াই চলছে রুফটপ রেস্তোরাঁ। কোনও কোনও জায়গায় অগ্নি নির্বাপক মেশিন থাকলেও ফায়ার লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করানো নেই। সবেমাত্র শুরু হয়েছে সরকার নির্দেশিত এসওপি বাস্তবায়নের কাজ—এমন উদাহরণও আছে। মঙ্গলবার শহরের বিভিন্ন এলাকার মোট ২০টি রুফটপ রেস্তোরাঁ ও পানশালায় অভিযান চালিয়ে এমনই নানা গলদ নজরে এসেছে কলকাতা পুরসভা, দমকল ও পুলিশের যৌথ দলের। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যাবতীয় নিয়ম দ্রুততার সঙ্গে মানতে হবে বলে ফের সতর্ক করা হয়েছে। একাধিক রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রে অবশ্য নিয়ম মেনে চলার সদিচ্ছা এবং উদ্যোগ স্পষ্ট বলে মনে করছেন আধিকারিকরা। তাদের বাকি বিধিগুলি কার্যকর করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিন দু’পাতার প্রশ্নপত্র নিয়ে ময়দানে নেমেছিল যৌথ দল। কোন ওয়ার্ড, কোন বরো, সংশ্লিষ্ট রুফটপের ঠিকানা সহ যাবতীয় বিষয় নিয়ে মোট ৩১টি প্রশ্ন তৈরি করে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ। সেই প্রশ্নমালা হাতে নিয়েই হয়েছে অভিযান। ছাদের ৫০ শতাংশ ছাড়া হয়েছে কি না, ফায়ার লাইসেন্স, মিউটেশন থেকে শুরু করে পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স—সবকিছু ঠিকঠাক রয়েছে কি না, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বাইরে বেরোনোর জন্য ক’টি সিঁড়ি আছে বা ছাদের দরজা খোলা থাকছে কি না—এরকম নানা প্রশ্নের উত্তর লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, বেশ কিছু জায়গায় এসওপি মেনে পরিকাঠামোয় কিছু বদল আনা হলেও একাধিক বিচ্যুতি রয়েছে এখনও। এক অফিসার বলেন, ‘বেশ কয়েকটি রুফটপ রেস্তোরাঁ নতুন অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র বসিয়েছে। ফায়ার এগজিট ঠিকঠাক থাকলেও ছাদে ৫০ শতাংশ ছাড়ের সুযোগ নেই। কোথাও আবার ছাদে যথেষ্ট ওপেন স্পেস থাকলেও রান্না চলছে গ্যাসেই। বেলেঘাটার একটি রুফটপ রেস্তোরাঁয় পুরোনো পরিকাঠামো ভেঙে ছাদ ৫০ শতাংশ খোলা রাখার কাজ সবে শুরু করেছে।’ কোন রেস্তোরাঁ ক’টি নিয়ম মেনেছে, কারা মানেনি, সবটাই রিপোর্ট আকারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা পড়বে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ এপ্রিল বড়বাজারের একটি হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শিশু সহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়। তারপর নবান্নের নির্দেশে অগ্নিবিধি মেনে কীভাবে বহুতল বা রুফটপে রেস্তোরাঁ চালানো সম্ভব, তা নিয়ে অভিন্ন বিধি প্রণয়ন করে মেয়র তথা পুর ও নগরোয়ন্ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিগোষ্ঠী। পুজোর আগে জানানো হয়েছিল, বিধিগুলি কার্যকর করার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিলে রুফটপ রেস্তোরাঁ চালু করা যাবে। তবে, তিন মাস সময়সীমার মধ্যেই বিধি কার্যকর করে ফেলতে হবে। সম্প্রতি গোয়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষিতে আরও সতর্ক পুরসভা সময়সীমা শেষ হওয়ার ক’দিন আগে থেকেই সরেজমিনে পরিদর্শন শুরু করেছে।