• দলের নীচুতলায় ‘তৃণমূলী সুর’, হুগলিতে পথ হাতড়াচ্ছে বিজেপি
    বর্তমান | ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: আগের বার ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’ আওয়াজ তুলে বিধানসভা নির্বাচনে নেমেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কার্যত শাসকদলের সেই ভোটমন্ত্রই এবার ভিন্ন সুরে জপছে বিজেপি। আরও ভালো করে বললে হুগলি সাংগঠনিক জেলার বিজেপির নীচুতলার নেতা-কর্মীরা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সেই সুর তোলা হচ্ছে আরও একটা বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে। বিজেপির নীচুতলার নেতা-কর্মীদের দাবি, দিল্লি-গুজরাত থেকে ‘পরিকল্পনা’ এবং ‘নেতা’ ধার করে গঙ্গাপাড়ের ভোটে ঝান্ডা পোঁতা যাবে না। বাংলার রাজনীতি ও সংস্কৃতি দিল্লি, মুম্বই-গুজরাত থেকে পৃথক। সেটা দলের শীর্ষনেতাদের সবার আগে বুঝতে হবে। নাহলে ২০২৬ সালেও গঙ্গাপাড়ের পলিমাটিতে ভরাডুবিই ভবিষ্যৎ।

    আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে দলের নীচুতলার নেতা-কর্মীদের ভাবনার হদিশ পেতে সম্প্রতি পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় কমিটি। সেই পর্যবেক্ষকের সামনেই ভোটের জন্য ‘বাংলা মডেল’ চেয়ে বসেছেন নীচুতলার কর্মীরা। যা চমকে দিয়েছে পর্যবেক্ষককে। চমকেছেন হুগলির সাংগঠনিক জেলার পদাধিকারীরাও। তাঁদের দাবি, তাঁরা যা বলতে পারেননি, নিচুতলার কর্মীরা তা করে দেখিয়েছেন। জেলাস্তরের এক দাপুটে নেতা বলেন, ভোট মানেই ভিন রাজ্য থেকে পদাধিকারীরা আসবেন। তাঁদের পরিকল্পনা মেনে নিয়ে নীচুতলার কর্মীদের কার্যত ফাই-ফরমাশ খাটতে হয়। সেই রীতি বদলের দাবি উঠেছে। দিল্লির পর্যবেক্ষকের কাছে সেই বার্তাই দিয়েছেন হুগলির সাতটি বিধানসভার কর্মীরা। বাঙালি সংস্কৃতি, মননকে বুঝে এখানকার গ্রাম-শহরের নিজস্ব ধাঁচে ভোটের পরিকল্পনা তৈরিতে জোর দিয়েছেন কর্মীরা। দলের অন্দরে বাংলায়নের এই চড়া সুর নিয়ে সরাসরি মন্তব্য এড়িয়েছেন হুগলি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সুরেশ সাউ। তিনি বলেন, দলের অন্দরে কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলব না। বিজেপিতে গণতন্ত্র আছে। তাই একেবারে নীচুতলার নেতা-কর্মীদের কথাও শোনা হয়। আবার ভোট একটি বিশেষ রাজনৈতিক কর্মসূচি। তা নিয়ে বিজেপির মতো শৃঙ্খলাবদ্ধ দলের নিজস্ব পরিকল্পনা থাকে এবং থাকবে। পদ্মপার্টির অন্দরের চর্চায় অবশ্য উল্লসিত শাসকদলের পোড়খাওয়া নেত্রী অসীমা পাত্র। তিনি বলেন, এটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দূরদর্শী। হুগলির বিজেপির নেতা-কর্মীদের একাংশ এবার তা মেনে নিলেন। বিজেপির অন্দরেই এনিয়ে ক্ষোভ তৈরি করেছে। পদ্মপার্টি বাংলার নাগরিকদের জন্যও অপ্রয়োজনীয়।

    বিজেপির নিচুতলার নতুন ভাষ্য ঘরে-বাইরে চর্চায় তুফান তুলেছে। তাতে রাজনৈতিক মহলও ভিন্ন চর্চার খোরাক পাচ্ছে। ওই মহলের দাবি, ভোটের বাকি কয়েক মাস। এই অবস্থায় হুগলি জেলায় পদ্মপার্টির অন্দরে কৌশল নিয়ে বিতর্কের জেরে অন্য একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। তা হল, মমতার রাজনীতিকে টেক্কা দেওয়ার মতো তুরুপের তাস এখনও হুগলির পদ্মপার্টির হাতে নেই।
  • Link to this news (বর্তমান)