• ছয়-সাততলা বিল্ডিং প্ল্যানের অনুমোদন দিচ্ছে পাতুলিয়া পঞ্চায়েত, বিপুল রাজস্ব ক্ষতি রাজ্যের
    বর্তমান | ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • বিশ্বজিৎ মাইতি, বরানগর: রাজ্য সরকারের নির্দেশকে থোড়াই কেয়ার! মর্জিমাফিক আকাশচুম্বী বহুতল নির্মাণের অনুমোদন দিচ্ছে খোদ গ্রাম পঞ্চায়েত। এই ধরনের নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা বা এক্তিয়ার নেই গ্রাম পঞ্চায়েতের। কিন্তু একের পর এক সেই ঘটনাই ঘটে চলেছে  খড়দহ ও বারাকপুর পুরসভা লাগোয়া পাতুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে। অসাধু কারবারিদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে রাজ্য সরকার। শুধু তাই নয়, নিয়মকানুনের কোনও তোয়াক্কা না করায় বহুতলগুলির ভবিষ্যৎ ও সেখানকার বাসিন্দাদের সুরক্ষার প্রশ্নেও বাড়ছে ঝুঁকি। সম্প্রতি স্থানীয় বাসিন্দারা পাতুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে রহড়া থানায় এনিয়ে মাস পিটিশনও জমা দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জমছে শাসক দল তৃণমূলের অন্দরেও। 

    আইন অনুযায়ী সাড়ে ৬ মিটার উচ্চতা ও ১৫০ স্কোয়ার মিটার (প্লিন্থ এরিয়া) আয়তনের বাড়ি নির্মাণের অনুমতি দিতে পারে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত। সাড়ে ৬ মিটার উচ্চতা ও ৩০০ স্কোয়ার মিটার আয়তনের নির্মাণের জন্য অনুমোদন দেবে পঞ্চায়েত সমিতি। ১৫ মিটার উচ্চতা ও ৩০০ স্কোয়ার মিটারের বেশি পর্যন্ত জেলা পরিষদ অনুমোদন দেবে। এর চেয়েও বড় নির্মাণ হলে অনুমোদন নিতে হবে সরাসরি পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর থেকে। অভিযোগ, পাতুলিয়া পঞ্চায়েতে এই নিয়ম শুধু খাতায়-কলমেই আছে। বাস্তব চিত্র অন্য।

     পাতুলিয়া পঞ্চায়েতের একদিকে খড়দহ, অন্যদিকে বারাকপুর পুরসভা। পঞ্চায়েত এলাকার মাঝ বরাবর গিয়েছে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে। রয়েছে রহড়া থানা। ফলে পাতুলিয়া পঞ্চায়েত এলাকার জমি এখন সোনার চেয়েও দামি! এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে অসাধু কারবারিরা। জলাজমি ভরাট, খাস জমি দখল, পুকুর ভরানো চলছে রমরমিয়ে। এই আবহে পাতুলিয়া পঞ্চায়েতের বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। পাতুলিয়া বাজার ও ওল্ড কলকাতা রোডে ইতিমধ্যে ন’টি বহুতল মাথা তুলেছে। পাঁচতলা থেকে সাততলার এই আবাসনগুলির কোনওটি সম্পূর্ণ, কোনওটি নির্মীয়মাণ। এই নির্মাণগুলি সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, সেই নজরদারির পরিকাঠামো নেই পঞ্চায়েতের কাছে। তারপরও পঞ্চায়েত কীভাবে অনুমোদন দিচ্ছে? আগামী দিনে ফ্ল্যাট কেনা সাধারণ মানুষ বিপদে পড়লে দায় কার, উঠছে সেই প্রশ্নও।

    এক নির্মীয়মাণ ফ্ল্যাটের প্রোমোটারকে ক্রেতা সেজে ফোন করা হলে তিনি স্বীকার করে নেন যে পঞ্চায়েতের অনুমোদিত বিল্ডিং প্ল্যানেই বহুতল তৈরি হচ্ছে। আগামী দিনে সমস্যা হবে কি না, জানতে চাইলে তাঁর জবাব, ‘সব আবাসন তো এভাবেই হচ্ছে। ব্যাঙ্ক লোনও মিলছে। তবে ভয় পেলে কয়েক মাস অপেক্ষা করে যান। জেলা পরিষদের অনুমোদনে আমাদের নতুন একটি প্রোজেক্ট হবে। সেখানে ফ্ল্যাট পেয়ে যাবেন। তবে খরচ বাড়বে।’ কেন বেশি দাম? প্রোমোটার বলেন, ‘ওখানে প্ল্যান পাশ করাতে বেশি খরচ। ছাড়ও বেশি দিতে হয়।’ 

    পাতুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তপতী দাস বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘বেআইনি নির্মাণ হলে গ্রাম পঞ্চায়েতের উচিত প্রশাসনকে জানানো। পঞ্চায়েত একতলার বেশি বিল্ডিং প্ল্যান দিতে পারে না। কোনও অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।’ স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে মন্তব্য করব।’  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)