• যেন মনে হচ্ছে হরিদা, শ্যামদা! মমতার নিশানায় মোদী, উত্তাপ সংসদেও
    এই সময় | ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: সংসদ থেকে কলকাতার রাজপথ— প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে ‘বঙ্কিমদা’ নিয়ে তোলপাড় মঙ্গলবারও। সোমবার লোকসভার পরে এ দিন রাজ্যসভায় ছিল ‘বন্দে মাতরম’ ইস্যুতে ১০ ঘণ্টার আলোচনাপর্ব। আবার সংসদের নিম্নকক্ষে এ দিন ভোটার তালিকায় নির্বাচনী সংস্কার ইস্যুতে আলোচনা শুরু হয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে নমোর মন্তব্যকে হাতিয়ার করে দুই কক্ষের জোড়াফুল সাংসদরাই সরব হন। সোমবার সংসদে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রকে মোদী ‘বঙ্কিমদা’ বলে একাধিকবার উল্লেখ করার পরপরই তাঁর ভুল ধরিয়ে দিয়েছিলেন প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তারপরে মোদী ‘বঙ্কিমবাবু’ বলে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করলেও দেশের মানুষ তাঁকে ক্ষমা করবেন না বলে এ দিন তোপ দেগেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

    কোচবিহারে এ দিন তৃণমূলের জনসভায় মমতা সরাসরি মোদীর নাম না–করে বলেন, ‘কাল (সোমবার) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বললেন, বঙ্কিমদা। যেন মনে হচ্ছে হরিদা, শ্যামদা! বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, যিনি ন্যাশনাল সং রচনা করেছিলেন, তাঁকে এইটুকু সম্মান দিলেন না! আপনাদের তো মাথা নিচু করে নাকখত দেওয়া উচিত জনগণের কাছে। তাতেও ক্ষমা হবে না। আপনারা অসম্মান করেছেন দেশের ইতিহাসকে, দেশের সংস্কৃতি, দেশের (স্বাধীনতা) আন্দোলনকে।’

    মোদীর এই মন্তব্যের প্রতিবাদে মঙ্গলবারও সংসদে সরব হয়েছে তৃণমূল। পুরনো সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে তৃণমূলের সাংসদরা গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছবি হাতে প্রতিবাদ জানান। পুরোনো সংসদ ভবনের গেটেও চলে প্রতিবাদ। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে সাহিত্য সম্রাটকে ইনসাল্ট করেছেন, তার প্রতিবাদে দলের লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদরা সংসদের সেন্ট্রাল হলে মৌন প্রতিবাদ জা‍নিয়েছেন। বাংলার মানুষের কাছে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতেই হবে।’

    লোকসভায় এ দিন নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে বিতর্কে ভাষণ দিতে গিয়ে তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বঙ্কিমদা’ বিতর্কে কেন্দ্রের শাসকদলকে দুষেছেন। নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি টেনে আনেন ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (সার), বাঙালি হেনস্থার প্রসঙ্গও। সেই সূত্রে তৃণমূলের আইনজীবী–সাংসদ বলেন, ‘বিজেপি আসলে বাঙালি বিদ্বেষী৷ এই কারণেই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়, রাজা রামমোহন রায়কে কটূক্তি করা হয়। ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বঙ্কিমদা বলা হয়৷ প্রধানমন্ত্রী তাঁকে অসম্মান করেন৷ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মোদীর তিন প্রজন্ম আগের সময়ের মানুষ— তাঁকেও উনি দাদা বলে দেন।’ কটাক্ষের সুরে তাঁর সংযোজন, ‘কখনও কোনও গুজরাটিকে তো দাদা বলেন না! বল্লভভাই প্যাটেলদা বলেন কি! আসলে ওঁরা বাঙালিদের ঘৃণা করেন।’ মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস এ দি‍ন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও শশী পাঁজার নেতৃত্বে গণপরিষদের প্রথম বৈঠকের ৮০–তম বার্ষিকী উপলক্ষে কলকাতায় মিছিল করে। সেই মিছিল থেকেও মোদীর ‘বঙ্কিমদা’ মন্তব্য নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূলের মহি‍‍লা ব্রিগেড।

    প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যে এমনিতেই অস্বস্তিতে পড়েছে বঙ্গ–বিজেপি। তবে তাঁরা কোনও ভাবে সেই অস্বস্তি প্রকাশ্যে এড়ানোর চেষ্টা করছেন। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মুজমদার এ দিন বলেছেন, ‘তৃণমূল একটি বক্তব্যকে নিয়ে জলঘোলা করার চেষ্টা করছে। বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে তৃণমূলের এত মায়া, মমতা কেন? এতদিন তৃণমূল নেতারা কোথায় ছিলেন? বঙ্কিমচন্দ্র ও বাঙালির গুরুত্ব যদি কেউ বোঝে সেটা বিজেপি–ই।’ যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের স্পষ্ট বক্তব্য, গেরুয়া শিবিরের নেতাদের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে কোনও ভূমিকা ছিল না। জনসংঘ থেকে বিজেপি তৈরি হয়েছে। ব্রিটিশ শাসিত ঔপনিবেশিক ভারতে জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কখনও কোনও আন্দোলন করতে গিয়ে জেলে যাননি। কোচবিহারে মমতা এ দিন বলেন, ‘কারা স্বাধীনতা আন্দো‍লন করেছিল? উত্তর হলো, বাংলা। যাঁরা ফাঁসিকাঠে উঠেছিলেন, তাঁদের ৯০ শতাংশ বাংলার। (সেলুলার) জেলে যাঁরা বন্দি ছিলেন, তাঁরা বাংলার আর কিছু ছিলেন পঞ্জাবের। তখন কোথায় ছিলে‍ন আপনারা? রাজা রামমোহন রায়কে বলে দিলেন, তিনি নাকি দেশপ্রেমিক নন। ক্ষুদিরামকে বলে দিলেন সন্ত্রাসবাদী। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙলেন!’

    মোদীর মুখে ‘বঙ্কিমদা’ সম্বোধন নিয়ে প্রতিবাদী হয়েছে বাম ও কংগ্রেসও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বঙ্কিমদা, মাস্টারদাকে শুধু সূর্য সেন বলা মানে অসভ্যতা। প্রধানমন্ত্রীর উচিত, হাঁটু গেড়ে দেশের মানুষের সামনে ক্ষমা চাওয়া। অবশ্য মমতার এই নিয়ে কিছু বলা সাজে না। উনিও ডহরবাবু বলেছিলেন!’ কংগ্রেসও এই ইস্যুতে এ দিন মহানগরে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে মিছিল করেছে। সেখানে পোড়ানো হয় মোদীর ছবি।

  • Link to this news (এই সময়)