সুমন ঘোষ, খড়্গপুর
এক সময়ে 'খড়্গপুর' শহরের নাম শুনলেই আঁতকে উঠতেন মানুষ। কারণ, এই রেলশহরে তখন মাফিয়ারাজ চলত। ছোট-বড় মাফিয়ার দাপটে সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হতো। কথায় কথায়, গুলি-বন্দুকই বের করাই ছিল দস্তুর। তবে, মাফিয়ারাজ খতম হয়েছে। রামবাবুর সে রাজত্ব আর নেই। মৃত্যু হয়েছে শ্রীনু নাইডুরও। কিন্তু দাদাগিরি, বেআইনি ব্যবসা, মাদকের কারবার কি পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে? উত্তরটা না। এ বার সেই সব কারবার ও দাদাগিরি বন্ধ করতে দাবাং স্টাইলে হাঁটতে চলেছে খড়্গপুর পুলিশ। ইতিমধ্যে হাতেগরম দু'টি নমুনাও মিলেছে।
পুলিশ যে এই পথেই হাঁটবে তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন সদ্য যোগ দেওয়া খড়্গপুর টাউন থানার আইসি পার্থসারথি পাল ও খড়গপুরের এসডিপিও ধীরাজ ঠাকুর। কাজে যোগ দিয়েই মোটরবাইকে শহরের অলিগলি ঘুরে বেরিয়েছেন আইসি। কথা বলেছেন পথচলতি মানুষের সঙ্গে। থানায় নতুন আধিকারিক যোগ দেওয়ায় অনেকেই সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য গিয়েছেন তাঁর কাছে। সেখানেও উঠে এসেছে শহরের নানা সমস্যার কথা। প্রতিটি সমস্যা তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন। শুরু করেছেন 'অপারেশনও'। ইতিমধ্যেই বেআইনি মদের ঠেকে গিয়ে মদের বোতল ভেঙেছেন।
তৃণমূলের পদাধিকারী হিসেবে বোর্ড লেখা গাড়ি থেকেও ধরেছেন সশস্ত্র দুষ্কৃতী। স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছেন, শাসকদল হোক বা বিরোধী দাদাগিরি চলবে না। আইসি বলছেন, 'খড়্গপুর শহরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাদাগিরি চলতে দেবো না। সাধারণ মানুষের সমস্যা তৈরি করে জোরে ডিজেও বাজাতে দেবো না। বেআইনি মাদক বন্ধেও কড়া পদক্ষেপ করা হবে।' এসডিপিও ধীরাজ ঠাকুরও বলেন, 'কোনও ক্রাইম বরদাস্ত করা হবে না।' খড়্গপুর শহরে বেআইনি মদ ও মাদক কারবারের রমরমার কথা অনেকেরই জানা। তা নিয়ে একাধিকবার বিক্ষোভ হয়েছে। মহিলারা দলবেঁধে বেআইনি মদ ব্যবসায়ীর বাড়িতে চড়াও হয়ে মদের বোতল ভাঙচুর করেছেন। বিভিন্ন বস্তিতে হেরোইন, ব্রাউন সুগার, চরস, গাঁজার মতো মাদক বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচবেড়িয়া, নিমপুরা, সুভাষপল্লি, গোলবাজার, পুরী গেট সংলগ্ন এলাকা-সহ বিভিন্ন এলাকায় এই ধরনের ঘটনা ঘটে। হতদরিদ্র বস্তির যুবকদের 'পেডলার' তৈরি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাদক কারবার চালায়। এত দিন অভিযোগ পেলেও পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে এসেছিল বলে অভিযোগ। সম্প্রতি মাদক বিক্রির অভিযোগে এক মহিলা সরব হওয়ায় তাঁর বাড়ির সামনে রাখা চার চাকা গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছিল। থানায় নতুন আইসি যোগ দিতেই এমন ঘটনার কথা ফের উঠে আসছে। এ সবের বিরুদ্ধে নিয়মিত তল্লাশি চলবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বর্তমানে তারস্বরে রাতভর ডিজে বাজানো একটি জ্বলন্ত সমস্যা।
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। সেই পার্বণে যুক্ত হয়েছে বুক কাঁপানো ডিজে। ঘরের জানলা, দরজা বন্ধ করেও নিষ্কৃতি মেলে না। বাড়িতে অসুস্থ কেউ থাকলে চরম বিপাকে পড়তে হয়। ডিজে বাজানো নিয়ে আবার প্রতিযোগিতাও চলে দু'পক্ষের মধ্যে। তা বন্ধ করতে গিয়ে গণেশ পুজোয় আক্রান্ত হয়েছিল পুলিশ! এ বার পুলিশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সরকারি নিয়মে রাত ১০টার পরে ডিজে বাজানো যাবে না। অন্যথা হলে ডিজে-র সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হবে। বরদাস্ত করা হবে না মোটরবাইকের সাইলেন্সারে বিকট আওয়াজও।
পুলিশের কথার অবাধ্য হলে সাইলেন্সার কেটে নিয়ে তা থানায় জমাও রাখতে পারে পুলিশ! মিলেছে এমন ইঙ্গিতও। পাশাপাশি যানজট নিয়ন্ত্রণেও ট্র্যাফিক ব্যবস্থাতেও বহু পরিবর্তন করা হচ্ছে। পুলিশের বেশ কিছু বিষয়ে পদক্ষেপ ও গুচ্ছ পরিকল্পনার কথা শুনে খুশি শহরবাসী। তবে অনেকেই বলছেন, 'পুলিশের আশ্বাস শুনে তো ভালো লাগছে। তবে না-আঁচালে বিশ্বাস নেই।' এখন দেখার, দাবাং কায়দায় কতটা সফল হয় পুলিশ!