• গাড়ির অঙ্গসজ্জায় বাড়ছে বিপদ! রাশ টানতে কড়া ব্যবস্থা পুলিশের
    এই সময় | ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সোমনাথ মণ্ডল

    গভীর রাতে রাস্তায় ডিউটি করছেন পুলিশকর্মীরা। আচমকা কান ফাটানো আওয়াজে বুলেট ছুটিয়ে চোখের পলকে উধাও হয়ে গেলেন তিন যুবক! ‘ধুম’ সিনেমায় জন আব্রাহাম যে স্টাইলে অভিনয় করেছিলেন, শহরের রাস্তায় সেটারই বাস্তব রূপান্তর দেখালেন উঠতি বয়সের বাইক চালক। শহরের বিভিন্ন প্রান্তের সিসিটিভি ফুটেজে এমনই মডিফাই করা বাইক চালানোর ছবিতে উদ্বিগ্ন লালবাজার। পরিস্থিতিতে লাগাম টানতে তাই কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

    এমনিতে কলকাতা পুলিশের আওতাধীন ৫০৪ বর্গকিমি এলাকায় মাত্র ৬ শতাংশ রোড স্পেস। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটা কম। তার উপরে বাইক–গাড়ি মডিফাই করে রাস্তায় তাণ্ডবের জেরে বেড়ে চলেছে পথ দুর্ঘটনা। লালবাজারের বক্তব্য, এই ধরনের গাড়ি–বাইকের জন্য শব্দ এবং বায়ু দূষণেরও মাত্রা বাড়ছে শহরে।

    ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, বাইকের সাইলেন্সার বদল করে বিকট শব্দে মেতে ওঠা, অতিরিক্ত এলইডি লাগানো কিংবা রকমারি হর্ন লাগিয়ে ১০০ ডেসিবেলের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে সবচেয়ে বেশি। আর এ সবে রাশ টানতে কড়া হতে চাইছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের ডিসি ট্র্যাফিক শ্রীকান্ত জগন্নাথ রাও বলেন, ‘ধড়পাকড় শুরু হয়েছে। আইন না মেনে যদি কেউ গাড়ি বা বাইক মডিফাই করে অন্যের বিপদ ডেকে আনে, আমরা আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করব।’

    বাণিজ্য নীতির কারণে এখন শহরে বিদেশি বাইক এবং গাড়ির রমরমা। অন্যান্য রাজ্যের মতো কলকাতাতেও গাড়ি মডিফাই করে ‘জয় রাইড’ এখন জে়ন জি়–দের মধ্যে বেশ ট্রেন্ডিং। ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকে শর্ট ভিডিয়ো এবং রিলস বানিয়ে লাইক–ভিউ বাড়াতেও এমন গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়। ধরা যাক, কেউ কালো বা নীল রঙের গাড়ি কিনেছেন। পরে তাঁর মনে হলো, লাল রঙ করবেন। গাড়ির ছাদ কেটে সান রুফ করবেন। অথবা আকর্ষণীয় দেখাতে গাড়িতে লাগানো ১৬ ইঞ্চি টায়ারের পরিবর্তে, লাগাবেন ১৮ ইঞ্চির টায়ার। এ সব কারণে গাড়ির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের বক্তব্য, এমন হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তো বাড়বেই।

    এ ধরনের অপরাধ করলে কী ব্যবস্থা নেবে পুলিশ? সূত্রের খবর, আরটিও–র অনুমতি না নিয়ে বাইক মডিফাই করে ধরা পড়লে মোটর ভেহিকলস অ্যাক্টের ১৯০ (২) ধারায় তিন মাস পর্যন্ত জেল অথবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। অথবা দু’টোই হতে পারে। অনুমতি না নিয়ে যে কোনও গাড়ির ‘ইল–লিগাল ভেহিকল অল্টারেশন’ হলে তার জন্য ৬ মাস জেল অথবা ৫ হাজার টাকা ফাইন অথবা দু’টোই হতে পারে বলে জানাচ্ছেন কলকাতা পুলিশের কর্তারা। কাস্টমাইজ় করে রঙ করা, এলইডি লাইট, স্টিকার, সাইলেন্সার, তীব্র শব্দ করা হর্ন লাগানো অথবা ইঞ্জিনের আপগ্রেডের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের আরটিও থেকে অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। পুলিশ কর্তাদের কথায়,‘বেশ কিছু কার–বুটিকও টাকার বিনিময়ে আইন না মেনে গাড়ি মডিফাই করে দিচ্ছে। সে বিষয়েও নজরদারি করা হচ্ছে।’

    মডিফিকেশন বিপদ, নজর পুলিশের

    ১) অতিরিক্ত শব্দ করে এমন সাইলেন্সার বা হর্ন না লাগানো

    ২) গাড়ি বা বাইকের ইঞ্জিনের (সিসি) ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়া

    ৩) গাড়ির ফ্রেম পরিবর্তন, কাস্টমাইজ়ড হ্যান্ডেল লাগানো

    ৪) নির্দিষ্ট সীমার বাইরে অতিরিক্ত ক্ষমতাসম্পন্ন আলো লাগানো

    ৫) নিয়ম ভেঙে টায়ার এবং সাসপেনশন আপগ্রেড করে ফেলা

    ৬) ডিজাইন নম্বর প্লেট অথবা কালো কাচ লাগানো

  • Link to this news (এই সময়)