• তিন বছর ধরে খড়দহ হাসপাতালের মর্গে পড়ে তিন দেহ
    আনন্দবাজার | ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • মাঝেমধ্যেই ভেসে আসছে দুর্গন্ধ। তাই নাকে রুমাল বা কাপড় চাপা দিতে হচ্ছে রোগীর পরিজনদের। অভিযোগ, হাসপাতালের মর্গে দীর্ঘ তিন বছর ধরে পড়ে থাকা তিনটি মৃতদেহে ক্রমশ পচন ধরছে। কিন্তু পরিজনদের না নেওয়া সেই দেহগুলির নিষ্পত্তি করা হচ্ছে না।

    এমনই অবস্থা খড়দহের বলরাম সেবা মন্দির স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। তিন বছর ধরে কী ভাবে মর্গের কুলিং চেম্বারে মৃতদেহ রয়েছে? এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি নন ওই হাসপাতালের সুপার সুব্রত রুইদাস। তাঁর কথায়, ‘‘এ বিষয়ে যা বলার, শীর্ষ কর্তারা বলবেন।’’ কেন এত বছরেও দেহগুলির নিষ্পত্তি করা যায়নি, এ নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের পদক্ষেপ কী— সেই বিষয়ে কোনও মহল থেকেই সদুত্তর মেলেনি।

    সূত্রের খবর, বলরাম সেবা মন্দির হাসপাতালের মূল ভবনের পিছনে থাকা মর্গে ছ’টি কুলিং চেম্বার রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে তিনটি তিন বছর ধরে ‘দখল’ হয়ে রয়েছে। ওই তিন রোগী চিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি হলেও পরে মারা যান। তাঁদের পরিচয় জানা গেলেও পরে পরিজনেরা দেহগুলি নিতে অস্বীকার করেন। তার পর থেকে হাসপাতালের মর্গেই পড়ে রয়েছে ওই তিনটি মৃতদেহ। হাসপাতালের অন্দরের খবর, দেহগুলিতে ভাল রকমের পচন ধরেছে। কোনটির একাংশের কঙ্কাল বেরিয়ে গিয়েছে। তা থেকেই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

    অন্য দিকে, ওই তিনটি দেহের জন্য সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এখন মৃত্যু হওয়া রোগীর পরিজনদের। কারণ, মর্গে দেহ রাখার মাত্র ছ’টি জায়গা পুরো ভর্তি থাকলে বাকিদের নিজেদের খরচ করে অন্যত্র দেহ রাখতে হচ্ছে। আর ওই তিনটি দেহ সংরক্ষণ করতে মর্গে কুলিং চেম্বারও সব সময়ে চালিয়ে রাখতে হচ্ছে। তাতে অতিরিক্ত বিদ্যুতের বিল গুনতে হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরকে। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ স্থানীয়দের প্রশ্ন, যে দেহগুলি নিতে অস্বীকার করেছেন তাঁদের পরিজনেরা, সেগুলিকে সংরক্ষণ করতে কেন সরকারি অর্থ খরচ করা হচ্ছে?

    নিয়মানুযায়ী, কোনও পরিবার দেহ নিতে অস্বীকার করলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদন মতো জেলা প্রশাসন ওই দেহের নিষ্পত্তির বন্দোবস্তকরে। কিন্তু খড়দহের ওই হাসপাতালের ক্ষেত্রে কেন তা আজও হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। হাসপাতালের অন্দরের খবর, এক বার রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠিও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও তিনটি দেহ নিষ্পত্তির কোনও ব্যবস্থা হয়নি।

    এ বিষয়ে জানতে রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা স্বপন সোরেনকে ফোন ও মেসেজ করা হলেও উত্তর মেলেনি। তবে ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)