ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) প্রক্রিয়া নিয়ে আক্রমণ অব্যাহত রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে বুথ লেভল অফিসারদের (বিএলও) নির্বাচন কমিশন ‘এত কাজ’ করাচ্ছে, তাঁদের জন্য বাড়তি ভাতার টাকা রাজ্য সরকারের থেকে নেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে এ বার প্রশ্ন তুললেন তিনি। পাশাপাশি, এসআইআর-এর শুনানি-পর্বের সময়ে সরকারি সহায়তা শিবির হবে বলে মঙ্গলবার কোচবিহারের জনসভা থেকে ফের জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে শিবির খুলে তাড়াহুড়ো করে শংসাপত্র দেওয়া কেন, তা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এসআইআর প্রক্রিয়া চলাকালীন ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে বিএলও-দের কাজের ‘চাপ’ নিয়ে মমতা ফের সরব হয়েছেন। কোচবিহারের রাসমেলার মাঠে তৃণমূল কংগ্রেসের সভা থেকে তিনি এ দিন বলেছেন, “বিএলও-রা অনেক কাজ করছেন। তিন জন বিএলও মারা গিয়েছেন, ১৫ জন হাসপাতালে। মৃত সকলের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে দিচ্ছি আমরা। তিন জন আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন। জীবন-মরণ এক করে লড়ছেন। তাঁদের দেখাশোনা আমরা করছি। বিএলও-দের বাড়তি টাকা গত কাল ছাড়া হয়েছে।” তাঁর সংযোজন, “আপনাদের (বিএলও-দের) কাজ করায় কমিশন, টাকা বাড়াবে রাজ্য সরকার। আর টাকা বন্ধ করে দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। কী সুন্দর তত্ত্ব (থিয়োরি)!”
সব স্তরের ভোটারেরা তালিকায় নাম তুলতে যাতে তৎপর থাকেন, তার জন্য ফের পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশিই তাঁর অভিযোগ, “(ভোটার) মারা যাননি, অথচ মৃত দেখাচ্ছে। বিবাহিত মেয়েরা বাপের বাড়ির ঠিকানা থেকে শ্বশুরবাড়ির ঠিকানায় নাম তুলবেন। কিন্তু তাঁদের বাদ দিয়েছে।” খসড়া ভোটার তালিকার ভিত্তিতে শুনানি-পর্বে ভোটারদের প্রয়োজনীয় নথিপত্রের জন্য দলীয় ও সরকারি শিবির থেকে সহায়তার আশ্বাসও আবার দিয়েছেন তিনি। জনতার উদ্দেশে মমতার পরামর্শ, “শুনানি-পর্বে কাগজপত্র যা থাকে, নিয়ে যাবেন। তা না-থাকলে আমাদের দলের ও সরকারের সহায়তা শিবিরে যান। বলুন, ‘আমার শংসাপত্র নেই, পরিবারের এক জনের আছে। সেটা দেখে কাগজ তৈরি করুন’।” জন্ম শংসাপত্র পেতে সমস্যা হলেও শিবিরে যেতে বলেছেন মমতা। দলীয় স্তরে ভোটারদের পাশে থাকার বার্তাও ফের দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। কারও নাম কাটা গেলে বিএলও-দের পাশাপাশি তৃণমূলের বিএলএ এবং দরকারে জেলাশাসকের দফতরের সঙ্গে তৃণমূলের দফতরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, “প্রতিটি ঘটনা দেখব।”
মমতা যে সহায়তা শিবিরের কথা বলেছেন, তার ‘উদ্দেশ্য’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী নেতা শুভেন্দু। তিনি হাতিয়ার করেছেন মুর্শিদাবাদের কান্দির বিডিও-র একটি নির্দেশিকাকে। সেখানে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্লকের পঞ্চায়েত দফতরগুলিতে ৮ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিবির খুলে তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং অন্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) শংসাপত্রের আবেদনের দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে এবং ‘ডেটা এন্ট্রি’র কাজ করা হবে। শুভেন্দুর অভিযোগ, “এত আতঙ্ক কেন? অযোগ্য ভোটারদের শংসাপত্র পাইয়ে দিইয়ে ভোটার তালিকায় নাম রাখার মরিয়া চেষ্টা করছে সরকার। রাজ্যে ২০০২-এর ভোটার তালিকার সঙ্গে অনেকেরই যোগসূত্র নেই। কমিশন তথ্য যাচাইয়ে নানা পদক্ষেপের কথা বলতেই সরকার ঘুরপথে ভুয়ো ভোটার বাঁচানোর খেলায় নেমেছে।” তাঁর সংযোজন, “ভুল শংসাপত্র দিয়ে মমতার সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রহসনে পরিণত করতে চাইছে। এর জেরে প্রকৃত অনগ্রসর মানুষও বঞ্চিত হবেন।” রাজ্যে ২৪ জুন ২০২৫-এর (বিহারকে দিয়ে এসআইআর শুরুর তারিখ) পরে থেকে জারি হওয়া সব শংসাপত্র যথাযথ ভাবে পরীক্ষা করার জন্যও কমিশনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন শুভেন্দু। কারণ, তাঁর দাবি, এমনিতেই রাজ্য সরকার ভুল ওবিসি শংসাপত্র দেওয়ার জন্য পরিচিত! তার উপরে এখন এই প্রক্রিয়ায় ‘ভুয়ো ভোটার’ ঢোকানোর চেষ্টা হচ্ছে।