খসড়া থেকে ভুয়ো চিনতে প্রস্তুতির বার্তা পদ্ম-বৈঠকে
আনন্দবাজার | ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
সংসদে নির্বাচনী সংস্কার-এসআইআর নিয়ে আলোচনার দিনে রাজধানীতে ওই একই বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন রাজ্যের একাধিক শীর্ষ নেতা। সূত্রের দাবি, খসড়া তালিকায় যে সব ব্যক্তির নাম নিয়ে সন্দেহ হতে পারে, তাদের তালিকা আগে থেকেই তৈরি করে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের মতে, আসল ‘খেলা হবে’ খসড়া তালিকাপ্রকাশের পরেই।
পশ্চিমবঙ্গে যে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর কাজ চলছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর তার খসড়া তালিকা প্রকাশ হওয়ার কথা। এখনও পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে, তাতে প্রায় ৫৭-৫৮ লক্ষের কাছাকাছি নাম বাদের তালিকায় চিহ্নিত হয়েছে। যা পরে আরও বাড়তে পারে। এর একটি বড় অংশই অবশ্য মৃত ভোটার। কিন্তু বিজেপির অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের অসংখ্য বুথে রাজ্য প্রশাসনের মদতে বিএলও-দের চাপ দিয়ে ইচ্ছে মতো ভোটারদের নাম তুলিয়েছে শাসক দল। যে কারণে গোড়ায় প্রায় ২২০০ মৃত্যুহীন বুথের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। যদিও পরে তা একক সংখ্যায় নেমে আসে। বিজেপির দাবি, আগামী সপ্তাহে যে খসড়া তালিকা প্রকাশিত হবে, তাতে প্রচুর ‘ভেজাল’ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সব ভুয়ো ভোটারদের কী ভাবে চিহ্নিত করা হবে, তা নিশ্চিত করতেই আজ বৈঠকে বসেন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা।
আজ সকাল সাড়ে ন’টায়দিল্লির দলীয় দফতরে ওই বৈঠক হয়। রাজ্য নেতাদের সঙ্গে থাকার কথা ছিল রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যেরও। কিন্তু সংসদে এনডিএ সাংসদদের বৈঠক থাকায় দলীয় বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি শমীক। পরে রাজ্য নেতারা আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে শমীকের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। সূত্রের মতে, আজকের বৈঠকে মূলত দলের বুথ লেভেল এজেন্ট (বিএলএ)-দের খসড়া তালিকায় ভুয়ো ভোটার খুঁজে বার করার ব্যাপারে বিশেষ ভাবে সক্রিয় থাকতে বলা হয়েছে। কারণ কোন বুথে কারা ভুয়ো ভোটার হতে পারেন, সে বিষয়ে হাতে-গরম তথ্য থাকার কথা সেই বুথের বিএলএ-র কাছেই। সেই কারণে খসড়া তালিকা প্রকাশের আগে থেকেই বিএলএ-দের নিজের এলাকার ভোটারদের সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ করে রাখতে বলা হয়েছে। যাতে খসড়া তালিকায় কোনও সন্দেহজনক ব্যক্তির নাম দেখলেই চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম হন তাঁরা।
দলের দাবি, সরকারি ভাবে প্রায় ৬০ লক্ষ নাম বাদ যাওয়ার মুখে। এর পর বিএলএ-রা যদি ঠিক ভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন, তা হলে গোটা রাজ্যে আরও বেশ কয়েক লক্ষ নাম বাদ যাবে। সূত্রের খবর, বিশেষ ভাবে নজর রাখতে বলা হয়েছে হিন্দু-মুসলিম অর্থাৎ মিশ্র জনসংখ্যার বুথগুলিতে।
বিজেপির এক সাংসদের দাবি, ‘‘গোড়া থেকেই আমরা বলে আসছিলাম এক কোটি নাম বাদ যাবে। এসআইআর প্রক্রিয়া বলছে, ক্রমশ সেই সংখ্যাটি বাস্তব হয়ে ওঠার পথে। তা হলে ভোটের আগে মনোবল ভেঙে যাবে তৃণমূলের।’’ আর তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ লোকসভায় নির্বাচনী সংস্কার বিতর্কে সুর চড়িয়ে বলেন, ‘‘যদি একজনও যোগ্য ভোটারের নাম বাদ যায় তা হলে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া হবে। কারণ কেউই সুপ্রিম কোর্টের থেকে বড় নয়।’’