• নাবালিকার পাকস্থলীতে চুলের কাটা, ত্রাতা আরজি কর
    আজকাল | ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • গোপাল সাহা

    হঠাৎ ছুটে এসে মাকে বেশ উঁচু গলায় চিৎকার করে মেয়েটি বলে উঠল, ‘মা প্রচণ্ড ব্যাথা করছে, সহ্য করতে পারছি না’। বুঝতে না পেরে বাবা-মা প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হন। সেখানে কোনও সুরাহা না মেলায় আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসেন চিকিৎসা করাতে। সেখানেই কেটে যায় বিপত্তি। আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসকদের দৌলতে জীবন ফিরে পেল ১৩ বছরের নাবালিকা। 

    হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলগাছিয়ার বাসিন্দা ওই নাবালিকা গত সপ্তাহের সোমবার খেলতে গিয়ে মাথায় চুলের কাটা গিলে ফেলে। কাটাটি পাকস্থলীতে বিঁধে যায়। এর পর থেকেই তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে মেয়েটি। নাবালিকার পরিবার জানিয়েছে, এই ঘটনার পর তাদের মেয়ের শারীরিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যাওয়ায় বুধবার তাকে আরজি করে নিয়ে আসা হয়। সেখানে আপৎকালীন বিভাগে দেখানোর পর পরীক্ষা করা হয় এবং তৎক্ষণাৎ ভর্তি করা হয় সার্জিক্যাল বিভাগে। প্রথমে এক্স-রে রিপোর্ট এবং পরে এনড্রস্কোপি রিপোর্ট দেখা যায় নাবালিকাটি একটি আনুমানিক পাঁচ সেন্টিমিটার লম্বা মাথায় পুতি বসানো চুলের কাটা খেয়ে ফেলেছে। আরও পরীক্ষা নিরীক্ষার পর গ্যাস্ট্রো বিভাগের চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন যে, ওই কাটাটি পাকস্থলীতে ফুটো করে অগ্নাশয় পর্যন্ত ঢুকে রয়েছে। অবশেষে সিদ্ধান্ত হয় অস্ত্রোপচার করে কাটাটি বার করা হবে। কিন্তু পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত বদল হয়। কোনও রকম অস্ত্রপ্রচার না করে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতেই বার করা হবে কাটাটি। 

    ওই নাবালিকার চিকিৎসায় আরজি করের গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা একটি বিশেষ দল গঠন করেন। যার দায়িত্বে ছিলেন বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক ও অধ্যাপক সুজয় রায়। চিকিৎসকদের দল সরাসরি অস্ত্রোপচার না করে মুখের দিয়ে পেটে ক্যামেরা প্রবেশ করিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ। 

    এই কাটাটি বার করেছেন চিকিৎসকরা। নিজস্ব চিত্র।

    এই ধরনের ঘটনায় অনেক সময় কাটা বার করে ফেলার পরেও রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় পাকস্থলী অথবা অগ্নাশয় থেকে। তাই বৃহস্পতিবার অস্ত্রোপচারের পরে ওই নাবালিকাকে দু’দিন চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। তবে এক্ষেত্রে তেমনটা ঘটেনি বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই নাবালিকা এখন সুস্থ, আর কোনও বিপদ নেই। তাকে শনিবার ছুটি দেওয়া হয়েছে। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে কিছু ওষুধ খেতে হবে।

    আজকাল ডট ইন-এর মুখোমুখি হয়ে সুজয় বলেন, “যখন এই রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে তখন পরিস্থিতি যথেষ্টই জটিল ছিল। আমরা সিদ্ধান্ত নিই কোনও অপারেশন না করে মুখ দিয়েই পাইপের মাধ্যমে ক্যামেরার প্রবেশ করিয়ে পেট থেকে আমরা কাটা বার করব। আর সেই আমরা কারণে একটি টিম তৈরি করি। যেখানে আমি নিজে এবং আমার সঙ্গে আরও কিছু জুনিয়র চিকিৎসকরা ছিলেন। সংঘটিত কাজের মাধ্যমেই এই সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। বাচ্চাটিকে তার পরিবারের হাতে আমরা তুলে দিতে পেরেছি সুস্থভাবে। তবে প্রথম দিকে একটু চিন্তিত ছিলাম যে, বিনা অস্ত্রোপচারে এই কাটা বার করা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু হাসপাতালে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা ও পরিকাঠামো থাকার কারণে বিনা অস্ত্রোপচারেই নাবালিকার পেট থেকে কাটা বার করে আনা সম্ভব হয়েছে। যা আমাদের টিম ওয়ার্কের  সাফল্য।”

    তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি পরিবারের বাবা ও মাকে সন্তানদের দিকে অবশ্যই নজর রাখতে হবে এবং এ ধরনের ঘটনা যেন কোনও অবস্থাতেই না ঘটে। কারণ, এই ধরনের কাটা যদি কোনও ভাবে শ্বাসনালীতে চলে যায় তাহলে প্রাণ বাঁচানো অসম্ভব হয়ে যায়। কয়েক মিনিটের মধ্যে বিপর্যয় ঘটতে পারে। অভিভাবকদের নজর রাখতে হবে কোনও অবস্থাতেই যেন শিশুরা বা বাচ্চারা যেন ধরনের জিনিস নিয়ে খেলা না করে এবং মুখে যেন না দিয়ে দেয়।”
  • Link to this news (আজকাল)