• দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির কার? এ কি পাবলিক প্রপার্টি, না কি পার্সোনাল? এই প্রশ্নে নতুন করে শুরু...
    ২৪ ঘন্টা | ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • অর্ণবাংশু নিয়োগী: বাঙালির প্রাণের মন্দির। বাঙালির স্বপ্নের তীর্থ। দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির (Dakshineswar Kali Mandir)। পরমহংস শ্রীরামকৃষ্ণের (Sri Ramakrishna) সাধনক্ষেত্র এটি। রামকৃষ্ণবিবেকানন্দ ভাবান্দোলনের লীলাক্ষেত্র। কিন্তু এ হেন মহাপবিত্র পুণ্যভূমি নিয়েও দানা বেঁধেছে কিছু বিতর্ক। উঠেছে কিছু প্রশ্ন। কী প্রশ্ন? দক্ষিণেশ্বর মন্দির কি পাবলিক প্রপার্টি, না, পার্সোনাল প্রপার্টি? দীর্ঘদিন নানা প্রশ্নে মামলা ঝুলে থাকার পরে এবার এই প্রশ্নে নতুন করে এই মামলার শুনানি শুরু হল হাইকোর্টে (Calcutta High Court)।

    দু'বছর চাপা

    ট্রাস্টি কমিটির নির্বাচন, আর্থিক অনিয়ম-সহ নানা অভিযোগে দায়ের হয়। মূল মামলা ২০২২ সালে শুরু হলেও শুনানি শুরু করেও গত প্রায় দু'বছর চাপা পড়ে গিয়েছিল। এবার দক্ষিণেশ্বর মন্দির সংক্রান্ত যাবতীয় মামলা পাঠানো হল বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ও বিচারপতি সুপ্রিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে।

    কেন্দ্র ও রাজ্যকে রিপোর্ট জমা  

    আগামী ১৭ ডিসেম্বর মূল মামলার শুনানি শুরু হবে। তার আগে কেন্দ্র ও রাজ্যকে নোটিস পাঠানোর নির্দেশ। এর আগের হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে কেন্দ্র ও রাজ্যকে আগামী শুনানিতে রিপোর্ট জমা দিয়ে জানাতে হবে দক্ষিণেশ্বর মন্দির ট্রাস্টকে তারা কোনো আর্থিক অনুদান দিয়েছে কি না।

    স্বপ্নাদেশে

    ১৮৫৫ সালের ৩১ মে স্নানযাত্রার দিন রানি রাসমণি এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দিরে মা কালীকে ভবতারিণী নামে পূজা করা হয়। কথিত আছে, রানি রাসমণি দেবী কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। রামকৃষ্ণ পরমহংসের দাদা রামকুমার চট্টোপাধ্যায় ছিলেন মন্দিরের প্রথম প্রধান পুরোহিত। ১৮৫৭-৫৮ সালে কিশোর রামকৃষ্ণ পরমহংস এই মন্দিরের পূজার ভার গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি এই মন্দিরকেই তাঁর সাধনক্ষেত্ররূপে বেছে নেন।

    মন্দির-মানচিত্র

    দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি-চত্বরে কালীমন্দির ছাড়াও রয়েছে একাধিক দেবদেবীর মন্দির। মূল মন্দিরটি নবরত্ন গোত্রের মন্দির। এটি টালিগঞ্জের বাবু রামনাথ মণ্ডল নির্মিত নবরত্ন মন্দিরের আদর্শে নির্মিত। এখানে মূল মন্দির ছাড়াও রয়েছে দ্বাদশ শিবমন্দির নামে বারোটি আটচালা শিবমন্দির। মন্দিরের উত্তরে রয়েছে শ্রীশ্রীরাধাকান্ত মন্দির, দক্ষিণে নাটমন্দির। মন্দির চত্বরের উত্তর-পশ্চিম কোণে রামকৃষ্ণ পরমহংসের বাসগৃহ। মূল মন্দির চত্বরের বাইরে রয়েছে নহবত বাড়ি, যেটি আদতে সারদামণির স্মৃতিবিজড়িত স্থান হিসেবেই ইদানীং গুরুত্ব লাভ করে ভক্তদের কাছে। উত্তোলিত দালানের উপর নির্মিত দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ির গর্ভগৃহ। মূল মন্দিরের কাছে যে বারোটি একই রকম দেখতে পূর্বমুখী শিবমন্দির রয়েছে, সেগুলি আটচালা স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত। মন্দির চত্বরের উত্তর-পূর্বে যে রাধাকান্ত মন্দির রয়েছে, সেখানে একটি রুপোর সিংহাসনে সাড়ে একুশ ইঞ্চির কৃষ্ণ ও ষোলো ইঞ্চির রাধামূর্তি প্রতিষ্ঠিত। এবং রয়েছে রানি রাসমণির গৃহদেবতা (রঘুবীর, জনার্দন কৃষ্ণ, নাড়ুগোপাল)।

    গৌড়ীয় স্থাপত্যের নবরত্ন

    দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরটি বঙ্গীয় স্থাপত্যশৈলীর বা গৌড়ীয় স্থাপত্যের নবরত্ন স্থাপত্যধারায় নির্মিত। মূল মন্দিরটি তিন তলা। উপরের দুটি তলে এর নয়টি চূড়া। মন্দির দক্ষিণমুখী। একটি উত্তোলিত দালানের উপর গর্ভগৃহটি স্থাপিত। দালানটি ৪৬ বর্গফুট প্রসারিত ও ১০০ ফুট উঁচু। এর গর্ভগৃহে-- যেটিকে স্যাংকটাম স্যাংকটোরাম বলে-- ভবতারিণী নামে পরিচিত কালীমূর্তিটি প্রতিষ্ঠিত। শিব ও কালীর দুটি মূর্তিই একটি রুপোর সহস্রদল পদ্মের উপর স্থাপিত।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)