জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: এ যেন পুরো হিন্দি সিনেমা! ভোলা ঘোষের (Bhola Ghosh) অল্টো গাড়িকে ধাক্কা মেরে উল্টো দিক থেকে আসা বাইকে চেপে লরির চালক ধাঁ। শাহজাহানের (Sheikh Shajahan) মামলার সাক্ষীর মৃত্যু হার মালায় চিত্রনাট্যকে।
সকাল থেকে শেখ শাহজাহানের সাক্ষীর রহস্যজনক দুর্ঘটনা, সাক্ষার ছেলের মৃত্যু, ট্রাকের চালকের পলায়ন- এই খবরে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল। ঘটনাক্রমে, আজই ছিল শাহজাহানের মামলার সাক্ষ্য় গ্রহণ। সাক্ষী ভোলা ঘোষ ও তাঁর ছেলে সকালে অল্টো গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন আদালতে। ন্যাজাট মোড়ের কাছে হঠাত্ একটি ফাঁকা লরি ওই গাড়ির পাশে এসে সজোরে ধাক্কা মেরে খানের জনে ফেলে দেয় ওই গাড়িকে। আর ঘাতক গাড়ির চালক পালায় সঙ্গে সঙ্গে উল্টোদিক থেকে আসা একটি মোটরবাইকে করে দ্রুত পালিয়ে যায়। এই ঘটনার পর স্বভাবতই জেলে বসে শেখ শাহজাহানের কলকাঠি নাড়া এবং এই ঘটনায় শেখ শাহজাহানের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আছে বলেই সকলে মনে করছে।
সাধারণ চোখে এটা নিছকই দুর্ঘটনা। কিন্তু এর পিছনেও একাধিক প্রশ্ন তুলছে ভোলানাথের পরিবার। তাঁর ঘনিষ্ঠরাও একাধিক বিষয়ে লিঙ্ক খুঁজে পাচ্ছেন। তাতে উঠে আসছে বিস্ফোরক তথ্য! জেলে বসেই কি তবে সাক্ষীকে খুনের ছক কষেছেন শাহজাহান?
ঘটনাক্রম, অর্থাৎ যেভাবে দুর্ঘটনাটি ও তার পরবর্তী সময়ে যা যা হল, সেটাই যথেষ্ট সন্দেহ জাগানোর পক্ষে। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল মুখোমুখি ধাক্কা মারা হয়েছিল। পরে জানা যায়, একটি দশ চাকার লরি, ভোলানাথের চার চাকার গাড়িতে পাশে ধাক্কা মারে। বাসন্তী হাইওয়েতে দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিস বলছে, বাসন্তী হাইওয়ে এমনিতেই দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা। কিন্তু যে জায়গায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, অর্থাৎ ন্যাজাটের বয়ারমারি পেট্রল পাম্পের কাছে, সেই এলাকা 'দুর্ঘটনাপ্রবণ' বলে চিহ্নিত করা নেই। ওই জায়গায় রাস্তা যথেষ্ট চওড়া। কোনও টার্নও নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করছেন, দশ চাকার লরি গাড়িকে একেবারে পিছন থেকে এসে পাশে এসে ধাক্কা মারে। তারপর কিছুটা দূর ধাক্কা মেরে ঠেলে খাদে ফেলে। চার চাকা গাড়ি একেবারে দুমড়ে মুছড়ে যায়। ভিতরেই আটকে পড়েন তিন জন। ঘাতক চালক লরি থেকে লাফিয়ে নামেন। কিছুটা দূরেই তখন একটি বাইক চলে আসে। বাইকে তিনি উঠে উধাও হয়ে যান বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ভোলার ছোট ছেলে ও গাড়ি চালকের। ভোলার চোট গুরুতর নয়। তবে ছেলের মৃত্যুর খবরে তাঁর বুকে ব্যথা হচ্ছে, তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
ভোলানাথ শেখ একজন তৃণমূল কর্মী। এক সময়ে তিনি শেখ শাহজাহানের সঙ্গী ছিলেন। এই মুহূর্তে তিনি ইডি ও সিবিআই মামলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। এদিনও যাচ্ছিলেন আদালতের পথেই। আদালতে বুধবার তাঁর সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল শাহজাহানের বিরুদ্ধেই। পথেই এই ঘটনা।
ভোলার পরিবার-সহ গ্রামবাসীদের একাংশের বক্তব্য, শাহজাহানের বিরুদ্ধে এহেন রেকর্ড আগেও রয়েছে, যে জেলে বসেই তিনি একাধিক প্ল্যানিং করেছে। এর আগে সন্দেশখালিতে মণ্ডল পরিবারের ওপর হামলা হয়েছে। অভিযোগ, তাতেও পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন শাহজাহানই। তাই ভোলার গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়া, তাঁর ছেলের মৃত্যু নিতান্তই কোনও সাধারণ দুর্ঘটনা বা কাকতালীয় নয়, জেলে বসে শাহজাহানও এই কাজ করতে পারেন বলে অভিযোগ উঠছে।
ভোলানাথের বড় ছেলে বিশ্বজিত্ ঘোষ সরাসরি এই ঘটনাকে চক্রান্ত করে ‘খুন’ বলছেন। বিশ্বজিৎ ঘোষের বক্তব্য, 'এর আগেও বাবাকে মারার জন্য হুমকি দিয়েছিল। বাবাকে খুনের উদ্দেশ্যেই গাড়ি ফলো করা হচ্ছে না। কোনও দুর্ঘটনা নয়, ১০০ শতাংশ খুন। শাহজাহানের নির্দেশ কাজ করেছে সবিতা রায়, মোসলেম শেখ।' উল্লেখ্য, এই মোসলেম শেখ হলে ন্যাজাট পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি, সবিতা রায় সভাপতি। তাঁদের বিরুদ্ধে শাহজাহানের হয়ে গ্রামে একচ্ছত্র অভিযোগ চালানোর অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য এবিষয়ে মোসলেম শেখের বক্তব্য, 'একাংশ শতাংশ মিথ্যা কথা।'
দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে ক্রমশ বাড়ছে রহস্য। সূত্রের খবর ২০২২ সালে শেখ শাহজাহানের সঙ্গে ব্যবসায়ী ভোলা ঘোষের মাছের ব্যাবসা নিয়ে প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকার চেক দিয়েছিল শেখ শাহাজান। ভোলা ঘোষের চেক বাউন্স হয়ে যাওয়ার পরে বসিরহাট মহকুমা আদালতে শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী ভোলা, পাল্টা শেখ সাহাজানও মামলা করেন সেই মামলায় আজ বসিরহাট মহকুমা আদালতে হাজির হওয়ার কথাছিল, ভোলা ঘোষ তার ছেলে সত্যজিৎ ঘোষ এবং ওর চালক শাহানুর মোল্লা। বসিরহাট মহকুমা আদালতের দিকে রওনা দিয়েছিলেন সেই সময় বাসন্তী হাইওয়ের বয়ারমারি এলাকায় মালঞ্চ থেকে ধামাখালীর দিকে খালি ট্রাক যাচ্ছিল সেই সময় তাঁদের চার চাকা গাড়িতে মারে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ভোলা ঘোষের ছেলে সত্যজিৎ ঘোষ ও সাহানুর মোল্লা। মূল ব্যবসায়ী ভোলা ঘোষ এর অবস্থা আশঙ্কজনক প্রথমে তাকে প্রথমে মিনাখাঁ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থা গুরুতর থাকায় কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই দুর্ঘটনা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে অর্থাৎ শেখ শাহজাহানের সাক্ষীকে পরিকল্পনা করে খুনের চেষ্টা নয় তো? বাড়ছে রহস্য ইতিমধ্যে গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তশুরু করেছে ন্যাজাট থানার পুলিস, পাশাপাশি ঘাতক ট্রাক চালকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিস।
এদিকে জেল মুক্তিতে মরিয়া শাহাজাহান। জামিনের আবেদন দ্রুত শুনানির জন্যে আদালতে দৃষ্টি আকর্ষণ সন্দেশখালি ত্রাস শাহজাহানের। আবার কখনও পদ্মা মন্ডলের মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ পুনির্বিবেচনার মামলা। তার মাঝেই তার বিরুদ্ধে মূল সাক্ষীর দুর্ঘটনা।