আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাতে হাতির গতিবিধি জানতে এতদিন ভরসা ছিল গ্রামবাসী কিংবা হুলা পার্টির সদস্যদের তৎপরতা। অন্ধকার নেমে এলে বন দপ্তরের নজরদারিতে তৈরি হত বড় সমস্যা। সেই সমস্যার স্থায়ী সমাধানেই এবার মাঠে নামল অত্যাধুনিক থার্মাল ড্রোন ক্যামেরা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মেদিনীপুর ডিভিশনে ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে এই প্রযুক্তির ব্যবহার। দক্ষিণবঙ্গে এই প্রথম থার্মাল ড্রোনের মাধ্যমে রাতের নজরদারি শুরু করল বন দপ্তর।
পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম মিলিয়ে প্রায় ২০০ হাতির বিচরণ। কোথাও বড় দল, কোথাও আবার দলছুট হয়ে ঘোরে এক বা দু’টি হাতি। অন্ধকারে তাদের অবস্থান চিহ্নিত করা যেমন কঠিন, তেমনই বিপদের আশঙ্কাও বাড়ে। অনেক সময় হাতির কাছাকাছি চলে আসায় বন কর্মীদের বিপদের মুখেও পড়তে হয়। সেই কারণেই নজরদারি চালাতে এবার কয়েক লক্ষ টাকার উন্নতমানের ড্রোন কিনেছে মেদিনীপুর ডিভিশন।
ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার (ডিএফও) দীপক এম জানান, “থার্মাল ড্রোন ব্যবহারে রাতে হাতির গতিবিধি স্পষ্টভাবে নজরে আসবে। এআই প্রযুক্তিযুক্ত এই নাইট ভিশন ড্রোন ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত নজরদারি চালাতে সক্ষম। শুধু হাতিই নয়, জঙ্গলে আর কী ধরনের প্রাণী রয়েছে তাও বোঝা যাবে। দিনের বেলা ব্যবহৃত ড্রোনের তুলনায় অনেক বেশি অত্যাধুনিক এই ড্রোন।”
ডিএফও আরও জানান, ড্রোনটিতে ৩০–৪০ মিনিটের 'পাওয়ার ব্যাকআপ' রয়েছে এবং অতিরিক্ত ব্যাটারিও দেওয়া হয়েছে। যার ফলে ড্রোন দীর্ঘক্ষণ উড়িয়ে নজরদারি চালানো যাবে। উচ্চ রেজুলেশনের ছবি তুলতে সক্ষম এই ড্রোনের সাহায্যে জঙ্গলে যেকোনও সন্দেহজনক নড়াচড়া এমনকী চোরা শিকারি বা কোনো অবাঞ্ছিত কারুর উপস্থিতিও ধরা পড়বে। আপাতত বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে ড্রোন চালানো হলেও দ্রুতই বন কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
বন দপ্তরের দাবি, হাতির গতিবিধির খবর দ্রুত পৌঁছলে গ্রামবাসীদের সতর্ক করা সহজ হবে। ফলে হাতির আক্রমণে ফসল বা সম্পত্তির ক্ষতি কমবে। মানুষের প্রাণহানি থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে মেদিনীপুর ডিভিশনে রয়েছে ২৫টির কাছাকাছি হাতি। এর পাশাপাশি এই ড্রোন ব্যবহারের আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গল মহলে হাতি–মানুষ সংঘাত রোধেও এই থার্মাল ড্রোন কার্যকরী হবে। ঝুঁকি কমবে বন কর্মীদের। ফলে নজরদারিতে এই ব্যবস্থা নতুন দিশা দেখাবে বলেই আশাবাদী বন দপ্তর।