দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়: দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে বাড়ছে রহস্য। সূত্রের খবর ২০২২ সালে শেখ শাহজাহানের সঙ্গে ব্যবসায়ী ভোলা ঘোষের মাছের ব্যাবসা নিয়ে প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকার চেক দিয়েছিল ভোলা ঘোষ। চেক বাউন্স হয়ে যাওয়ার পরে বসিরহাট মহকুমা আদালতে মামলা করেন ব্যবসায়ী ভোলা।
সন্দেশখালির বয়ারমারি এলাকায় বাসন্তী রোডের উপরে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত দুই। প্রথমে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতা একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছিল। তারপর মৃত্যু হয়। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার ন্যাজাট থানার বয়ারমারি এলাকার ঘটনা। একটি চার চাকা গাড়ি বাসন্তী রোড ধরে যাওয়ার সময় উল্টো দিক দিয়ে আসা একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ভোলা ঘোষের ছেলে সত্যজিত্ ঘোষ ও আরেকজনের। ভোলা ঘোষকে আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রথমে মিনাখাঁ হাসপাতাল তারপরে কলকাতাযর আমরি হালপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই বিস্ফোরক ভোলা ঘোষ। সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি স্পষ্ট ভাষায় এই ধটনায় অভিযুক্ত করেন, সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহানকে। জেলে বসেই এই যাবতীয় ঘটনার যড়যন্ত্র শাহাজান করেছে বলেই তিনি বলেন।
'২০২০ পর থেকে আর ব্যবসা করি না শেখ শাহজাহানকে আমি ব্যবসা শিখিয়েছি। শুধু কুড়ি লক্ষ টাকা নয়, আমি ওর থেকে অনেক টাকা পাই। আরও বেশি টাকা পাই সেটা এখন বলতে পারব না। শেখ শাহজাহান আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা মিথ্যে সাজিয়েছিল। বাড়িতে আমার পক্ষঘাতগ্রস্ত স্ত্রী রয়েছেন আমাদের পুরো জানে মেরে দিতে চেয়েছিল। ওই গাড়িটা চালাচ্ছিল আলিম গাজী, ওকে আমি দেখেছি আমি ওকে স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি। ও সরাসরি এসে উল্টো দিক থেকে এসে আমাদের গাড়িটাকে পিষে দিতে চেয়েছিল। আলিম শাহজাহান ঘনিষ্ঠ। ইডি সিবিআই এর একাধিক কেসে ওর নাম রয়েছে, কিন্তু ওকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। আলিম এলাকায় বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ায়। আমি বাড়িতে বসে গিয়েছিলাম। আমাকে দু'বছর আগে হাজি নুরুল আবার ডেকে আনে।'
তিনি আরও বলেন, 'শাজাহানকে আমি ব্যবসায় এনেছিলাম। ২০১৩ সালে ও টিএমসি জয়েন করে। মুকুল রায় এসে পতাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। তখন থেকেই আমাকে মাছের ব্যবসায় ওর সঙ্গে যুক্ত হতে হয়। একসাথেই ব্যবসা করছিলাম। কিন্তু 2019 এর পর ওর নানারকম ছলচাতুরির কাছে পরাস্ত হয়ে আমাকে এলাকা ছাড়া হতে হয়। তারপরে ২০২৪ এ যখন সিবিআই এই এলাকায় আসে শাজাহান গ্রেফতার হয়। তারপর আমাকে সিজিও কমপ্লেক্সে ডাকা হয়েছিল। সেখানে গিয়ে আমি ২০১৯ অবধি যা হয়েছে তাই বলেছিলাম কিন্তু এতে ওর ধারণা হয়ে যায় যে আমি ওর সম্বন্ধে সব বলে ফেলছি। ওকে বিপদে ফেলছি। সেই জন্যই আমার উপর আক্রমণ হতে পারে সেই আশঙ্কা করেছিলাম। আমাকে এক আমার ছেলেকে ধর্ষণের মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আজকে শুনানি ছিল। সেই জন্য বসিরহাটে যাচ্ছিলাম। আমার ছেলে ছাড়া কেউ জানত না। ওই ওই ওই ট্রাকের চালক আলিম মোল্লাকে আমি দেখেছি কালো সোয়েটার পড়া ও গাড়ি চালাচ্ছিল। ও গাড়ি দিয়ে আমাকে পুষে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিসকে আমি সব জানিয়েছি তদন্তের কারণে এর বেশি কিছু বলতে পারব না নিরাপত্তার অভাব তো আছেই কিন্তু আমার ছেলেই তো চলে গেল এর পরে আর কি হবে কাজেই আর নিজের চিন্তা করছি না।' কুড়ি লক্ষ নয় সাড়ে তিন কোটি কোটি টাকা পান বলে দাবি করেছেন ভোলাবাবু।
ভোলানাথের বড় ছেলে বিশ্বজিত্ ঘোষ সরাসরি এই ঘটনাকে চক্রান্ত করে ‘খুন’ বলছেন। বিশ্বজিৎ ঘোষের বক্তব্য, 'এর আগেও বাবাকে মারার জন্য হুমকি দিয়েছিল। বাবাকে খুনের উদ্দেশ্যেই গাড়ি ফলো করা হচ্ছে না। কোনও দুর্ঘটনা নয়, ১০০ শতাংশ খুন। শাহজাহানের নির্দেশ কাজ করেছে সবিতা রায়, মোসলেম শেখ।' উল্লেখ্য, এই মোসলেম শেখ হলে ন্যাজাট পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি, সবিতা রায় সভাপতি। তাঁদের বিরুদ্ধে শাহজাহানের হয়ে গ্রামে একচ্ছত্র অভিযোগ চালানোর অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য এবিষয়ে মোসলেম শেখের বক্তব্য, 'একাংশ শতাংশ মিথ্যা কথা।'
ভোলার পরিবার-সহ গ্রামবাসীদের একাংশের বক্তব্য, শাহজাহানের বিরুদ্ধে এহেন রেকর্ড আগেও রয়েছে, যে জেলে বসেই তিনি একাধিক প্ল্যানিং করেছে। এর আগে সন্দেশখালিতে মণ্ডল পরিবারের ওপর হামলা হয়েছে। অভিযোগ, তাতেও পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন শাহজাহানই। তাই ভোলার গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়া, তাঁর ছেলের মৃত্যু নিতান্তই কোনও সাধারণ দুর্ঘটনা বা কাকতালীয় নয়, জেলে বসে শাহজাহানও এই কাজ করতে পারেন বলে অভিযোগ উঠছে।