অর্ণবাংশু নিয়োগী: কলকাতা হাইকোর্টের এজলাসে আজ স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি মামলাকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে নবম দশম এবং একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া এবং ‘নট স্পেশালি ফাউন্ড টু বি টেইনটেড’ অর্থাৎ যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সরাসরি প্রমাণ মেলেনি, তাদের তালিকা প্রকাশ নিয়েই মূলত এই বাকবিতণ্ডার সূত্রপাত। আজ আদালতের পরিবেশ ছিল রীতিমতো থমথমে এবং বাদী ও বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ লক্ষ্য করা যায়।
আজকের শুনানিতে মূলত আইটেম নম্বর ৭ এবং ৯ ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। একদিকে নবম দশম শ্রেণীর ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কমিশন ইতিমধ্যেই যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা পৃথক করেছে। কিন্তু সমস্যা ঘনীভূত হয় একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীর নিয়োগ নিয়ে। মামলাকারীদের দাবি ছিল, অবিলম্বে সেই সমস্ত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হোক যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।
প্রশ্ন ওঠে যে প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা যোগ্য না অযোগ্য? সেই বিষয়টি না মিটিয়ে কেন ওয়েবসাইটে তালিকা প্রকাশ হবে? এই প্রশ্ন তোলা হয়। তাই সিল বন্ধ খামে তালিকা জমা পড়ল
সওয়াল-জবাব:
প্যানেল মেয়াদের পরে কাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল? তারা কারা? সেই সমস্ত প্রার্থীদের নাম আদালতের হাতে তুলে দিল কমিশন। যোগ্যদের মাঝে অযোগ্য কোনও প্রার্থী চলতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেনি তো? তা দেখার জন্যই নামের তালিকা চেয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা।
নির্দেশ মত সিল বন্ধ খামে প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নামের তালিকা দিল কমিশন।
আইনজীবির বক্তব্য:
মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীদের মতে, সেই তালিকায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার প্রার্থীর নাম থাকতে পারে। মামলার আইনজীবী আশিস চৌধুরী বলেন, 'আজ কমিশন সমস্ত ক্যান্ডিডেটদের নামে তালিকা দিয়েছে। তবে সেটা আপলোড করা যাবে না কোর্টের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে।'
প্রসঙ্গত, বিচারপতি অমৃতা সিনহা শুধু অযোগ্য নয় যোগ্যদের তালিকাও প্রকাশ করতে বলেছিলেন।
আইনজীবি আশিস চৌধুরী এমনও সওয়াল করেন যে, যাদের নিয়োগ হয়েছে তারা সকলেই অযোগ্য নয়। তাই আগে পিরো তালিকার যোগ্য-অযোগ্য আলাদাভাবে বিচার হোক। যারা যোগ্য, তাদের বক্তব্য শুনতে হবে। কবে নিয়োগের তালিকা প্রকাশ হয়েছিল, কবে নিয়োগ হয়েছিল, সমস্ত প্রকাশ করতে হবে।
শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ বাদানুবাদের পর আদালত আজ কোনো চূড়ান্ত নির্দেশ দেয়নি। তাৎক্ষণিক তালিকা প্রকাশের বদলে বিচারপতি সকল পক্ষকে এফিডেভিট বা হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলাটির পরবর্তী শুনানি আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত মুলতুবি রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, ২০২৫ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং বর্তমান চাকরিপ্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।
এর দুদিন আগেই, রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া (West Benga Primary Teacher Recruitment 2025) ঘিরে ফের এক গুরুত্বপূর্ণ আইনি রায় দিয়েছিল আদালত। ২০২৫ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ২৩-২৫ ডি.এল.এড (D.El.Ed) ব্যাচের প্রার্থীরা অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন কি না, তা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে (High Court Of Calcutta) দীর্ঘ সওয়াল-জবাব শেষ হয়েছিল কিছুদিন আগেই। বিচারপতি বিভাস পট্টনায়কের (Justice Bibhas Pattanayak) এজলাসে এই মামলার শুনানি সম্পন্ন হওয়ার পর অর্ডার ‘রিজার্ভ’ রাখা হয়েছিল। হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর নজর ছিল আদালতের চূড়ান্ত রায়ের দিকে। আদালত জানাল, ২০২৫ এর সেপ্টেম্বরের প্রাথমিকের নিয়োগের মামলা খারিজ করলেন বিচারপতি বিভাস পট্টনায়ক। আবেদনকারীর দাবি ছিল ২০২৩ এবং ২০২৫ এর ডি এল এড দের এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে দিতে হবে। তাই বিজ্ঞপ্তিকে খারিজ করুক কলকাতা হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: