দিল্লির স্কুল-কলেজে অবহেলার শিকার বাংলায় শিক্ষা, স্নাতক স্তরে আরও কমছে আসন
বর্তমান | ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: দিল্লির বিভিন্ন স্কুল এবং কলেজে বাংলা ভাষায় শিক্ষাকে ক্রমেই ইচ্ছাকৃতভাবে কোণঠাসা করে দেওয়া হচ্ছে। বাংলা বিষয় নিয়ে সেভাবে সচেতনই নয় শিক্ষামন্ত্রক। এমনই অভিযোগ বিশেষজ্ঞ মহলের। জানা যাচ্ছে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন একাধিক মহাবিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিএ কোর্সে বহু আসন ফাঁকা। বিশেষ করে যেসব বিএ কোর্সে বাংলা ভাষা রয়েছে, সেগুলির অবস্থা সবথেকে খারাপ। সূত্রের খবর, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আসন সংখ্যা আরও কমানোর কথা ভাবছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুধুমাত্র কলেজই নয়। দিল্লির বেঙ্গলি স্কুলগুলিতেও ক্রমশ পিছনের সারিতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাংলা ভাষাকে। কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের উৎসাহের অভাবকে। অর্থাৎ, সামগ্রিকভাবে দিল্লির প্রবাসী বাঙালির বাংলা ভাষা শিক্ষাতেই সরাসরি কোপ পড়ছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজের বিএ কোর্স পুনর্গঠনের পথেও হাঁটতে চলেছে কর্তৃপক্ষ।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গুটিকয়েক কলেজে স্নাতক স্তরে বাংলা পড়ানো হয়, তার মধ্যে অন্যতম দেশবন্ধু কলেজ, দয়ালসিং কলেজ, কিরোরিমাল কলেজ, মিরান্দা হাউস, জাকির হুসেন কলেজের ডে এবং ইভনিং শাখা। দেশবন্ধু কলেজে বাংলায় বিএ কোর্সে মোট আসন সংখ্যা মাত্র ১০। এর মধ্যে বাংলা ও ইতিহাস এবং বাংলা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জন্য পাঁচটি করে আসন বরাদ্দ। দয়ালসিং কলেজে ২৫টি। বিএ কোর্সে বাংলা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জন্য ন’টি, বাংলা ও ইতিহাসের জন্য আটটি এবং বাংলা ও অর্থনীতির জন্য রয়েছে আরও আটটি আসন। কিরোরিমাল কলেজে বাংলার জন্য বরাদ্দ ১৬টি আসন। এর মধ্যে বাংলা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং বাংলা ও ইতিহাসের জন্য আটটি করে আসন বরাদ্দ। মিরান্দা হাউসে এই সংখ্যা সাকুল্যে ছ’টি। অন্যদিকে, জাকির হুসেন কলেজের দু’টি শাখায় বাংলার বিএ কোর্সে মোট আসন সংখ্যা ৩১টি। এর অধিকাংশই শূন্য পড়ে থাকছে বলে অভিযোগ। জানা যাচ্ছে, গত ২৮ নভেম্বর এহেন বিএ কোর্সের পুনর্গঠনের জন্য আওতাভুক্ত সবক’টি কলেজের প্রিন্সিপালকে নিয়ে বৈঠক করেছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এব্যাপারে কেন্দ্রীয় শিক্ষা রাষ্ট্রমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার ‘বর্তমান’কে বলেছেন, নির্দিষ্ট করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে বাংলা সহ যেকোনও আঞ্চলিক ভাষা নিয়েই মোদি সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করছে। কেন্দ্রের কাছে মাতৃভাষায় শিক্ষা এবং মাতৃভাষা শিক্ষা দু’টোই গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চশিক্ষার বইও যাতে ছাত্রছাত্রীরা মাতৃভাষায় পড়তে পারেন, তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। বাংলাকে ইতিমধ্যেই ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতিও দিয়েছে কেন্দ্র। মিরান্দা হাউস কলেজের শিক্ষিকা আভা দেব হাবিবের অভিযোগ, কলেজে বাংলা তথা অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষা শিক্ষার গুরুত্বহীনতা সরাসরি প্রভাব ফেলছে দিল্লির বিভিন্ন স্কুলে। অবিলম্বে এব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ করা প্রয়োজন।