নিজস্ব প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ: জমি কিনতে হলে দিতে হবে লক্ষাধিক টাকা ‘তোলা’! না হলে রায়গঞ্জ শহরের দেবীনগর এলাকায় কেনা যাবে না কোনও জমি। মাফিয়াদের এই অলিখিত নিয়ম না মানায় কৌশিক তরফদার নামে শহরের এক ঠিকাদারকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল।
বুধবার সন্ধ্যায় এমনই একটি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ দায়ের হয়েছে রায়গঞ্জ থানায়। ঠিকাদারের বক্তব্য, ভীষণ আতঙ্কে রয়েছি। প্রকাশ্যে রাস্তায় আমাকে ঘিরে ধরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। যাতে শহরে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারি, তার জন্যই হুমকির ব্যাপারে রায়গঞ্জ থানার দ্বারস্থ হয়েছি। বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখে পুলিশ দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিক।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে রায়গঞ্জ থানার আইসি বিশ্বাশ্রয় সরকার বলেন, ওই ঠিকাদারের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২৩ নম্বর ওয়ার্ডের দেবীনগর এলাকার বাসিন্দা কৌশিক থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর জানান, তিনি পেশায় একজন ঠিকাদার। পৈতৃক ব্যবসা সামলান। কিছুদিন ধরে দেবীনগর এলাকায় একটি জমি কেনার মনস্থির করেছিলেন। সম্প্রতি সেই জমি দেখেও ছিলেন তিনি। সেকথা কোনওভাবে জানতে পারেন দক্ষিণ গোয়ালপাড়া ধূলিয়াবান এলাকার যুবক সরফরাজ আলম। তারপর থেকেই মাঝেমধ্যে কৌশিককে রাস্তাঘাটে বিভিন্নভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছিলেন সরফরাজ। কয়েকবার বেশকিছু কটূ কথাও বলেন। বিষয়টি প্রাথমিকভাবে এড়িয়ে যেতেন কৌশিক। কিন্তু তাতে থেমে থাকেনি। কয়েকদিন আগে আচমকা দেবীনগর এলাকায় রাস্তায় দাঁড় করিয়ে সরাসরি কৌশিককে হুমকি দেওয়া হয়। ঠিকাদারের কথায়, সরফরাজ বলে ওর অনুমতি ছাড়া দেবীনগর চত্বরে কোনও জমি কেনা যাবে না। সেটা করলে ও আমার বড় ক্ষতি করবে। আমাকে হুমকির সুরে নানাভাবে ভয় দেখায়। এরপর আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে প্রাণে মারার হুমকিও দিয়েছে। সে বলে ওদের কিছু করতে পারব না। ওর মাথায় অনেক বড় বড় লোকের হাত রয়েছে। এই কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম বলে রায়গঞ্জ থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।
উল্টোদিকে, যাঁর বিরুদ্ধে তোলাবাজি ও আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকির অভিযোগ, সেই সরফরাজ দাবি করেছেন, সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। বলেন, যিনি এই অভিযোগ করছেন, তাঁকে চিনি না। আমি রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। এছাড়াও বাবার ব্যবসা সামলাই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও করি। এ ধরনের কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত নই। কেন এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হয়েছে বুঝতে পারছি না। সরফরাজের দাবি, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের কয়েকজন দাদার সঙ্গে মেলামেশার জন্য তাঁকে অহেতুক টার্গেট করা হচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। এটা তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু নয়।