নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: খোদ জেলাশাসকের অফিস চত্বরকে প্রতারণার হটস্পট বানিয়ে ফেলেছে চাকরি বিক্রির গ্যাং। আঞ্চলিক পরিবহণ অফিসের সামনে ঘুরপাক খাওয়া দালালরা নিজেদের অফিসার পরিচয় দিয়ে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করছে। ৬ডিসেম্বর পাঁশকুড়ার কানাসি বৃন্দাবনচক গ্রামের সুপ্রিয়া সামন্ত নামে এক যুবতী তমলুক থানায় এনিয়ে এফআইআর করেছেন। তাঁর অভিযোগ, আঞ্চলিক পরিবহণ অফিসে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করাতে এসে সেখানকার দালাল সৌমেন মান্নার সঙ্গে পরিচয় হয়। অভিযুক্ত নিজেকে অফিসার পরিচয় দিয়ে প্রাইমারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে দু’লক্ষ ৩৫হাজার টাকা আত্মসাত করেছে। যদিও চাকরি হয়নি। তমলুক থানা থেকে তদন্তকারী অফিসার সৌমেনের বাড়িতে নোটিশ পাঠিয়ে তাকে তলব করেছেন। এরআগে ভগবানপুর থানার তালদা গ্রামের পবিত্র দাস ১০লক্ষ টাকার বিনিময়ে ডব্লুবিসিএস(এগজিকিউটিভ) অফিসার করিয়ে দেওয়ার নামে ওই চক্রের হাতে প্রতারণার শিকার হন। সেই মামলায় সৌমেন তিন মাস জেলও খাটে। ফের প্রাইমারি চাকরির নামে প্রতারণার মামলা দায়ের হয়।
সুপ্রিয়ার অভিযোগ, তিনি স্কুটির রেজিস্ট্রেশন করাতে তমলুক কালেক্টরেটে আঞ্চলিক পরিবহণ অফিসে গিয়েছিলেন। সেখানেই ময়না থানার গোজিনা গ্রামের সৌমেনের সঙ্গে পরিচয় হয়। নিজেকে শিক্ষা দপ্তরের অফিসার পরিচয় দিয়ে প্রাইমারি চাকরির প্রলোভন দিয়েছিল। চাকরি পাওয়ার জন্য ২লক্ষ ৩৫হাজার টাকা দেন সুপ্রিয়া। তারপর খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, সৌমেন সরকারি কর্মী কিংবা অফিসার নয়। সে একজন দালাল। কমিশনের বিনিময়ে জেলা পরিবহণ দপ্তরের অফিসে কাজে আসা লোকজনকে সহযোগিতা করে। চাকরি না হওয়ায় ওই যুবতী টাকা ফেরতের জন্য চাপ দেন। এনিয়ে সালিশিও হয়। সেখানে টাকা ফেরতের লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও টাকা ফেরত পাননি বলে সুপ্রিয়ার অভিযোগ। তিনি তমলুক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এরআগে ভগবানপুর থানার তালদা গ্রামের যুবক পবিত্র দাস একইভাবে ডিএম অফিস চত্বরে ওই চক্রের হাতে ১০লক্ষ টাকা দিয়ে প্রতারিত হন। আঞ্চলিক পরিবহণ অফিসের দুই দালাল সৌমেন ও গুরুপদ পাল এবং তমলুক কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক তন্ময় সামন্তের বিরুদ্ধে ১০লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। গুরুপদর বাড়ি ময়না থানার আড়ংকিয়ারানা গ্রামে। তন্ময়ের বাড়ি কোলাঘাট থানার ভোগপুরে। এফআইআর দায়ের হওয়ার পর সৌমেন গ্রেফতার হয়। বাকি দু’জন দীর্ঘদিন গাঢাকা দিয়ে কোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন। তবে, তন্ময় কয়েক বছর কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। যেকারণে কলেজের গভর্নিং বডি তাঁর মাইনে বন্ধ করে দেয়।
অভিযোগকারী সুপ্রিয়া বলেন, আমি স্কুটির রেজিস্ট্রেশন নম্বরের জন্য আঞ্চলিক পরিবহণ অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানেই সৌমেনের সঙ্গে পরিচয় হয়। শিক্ষা দপ্তরের অফিসার পরিচয় দিয়ে আমাকে প্রাইমারিতে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেয়। সেজন্য আমি ২লক্ষ ৩৫হাজার টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছি।
অভিযুক্ত সৌমেন মান্না বলে, প্রতারণার অভিযোগে আমি তিন মাস জেল খেটেছি। আমি ভুল করেই একটি প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলাম। এখন সেই ভুল বুঝতে পেরেছি। নিজে অসুস্থ হয়ে ভুবনেশ্বর এইমসে চিকিৎসা করাচ্ছি। তমলুক থানা থেকে একটি নোটিশ পেয়েছি। সুপ্রিয়া সামন্তের প্রতারণার ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন জড়িত। পুলিশি তদন্তে সবটাই বেরিয়ে আসবে।