দিল্লিতে ফের বাঙালি বিদ্বেষ! শাহের পুলিশের হাতে হেনস্তার শিকার ২০
বর্তমান | ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, জঙ্গিপুর: ফের দিল্লিতে কাজে যাওয়া ফরাক্কা ও সামশেরগঞ্জের ২০জন পরিযায়ী শ্রমিককে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে হেনস্তা করল পুলিশ। গত একবছরে এই একই অভিযোগে তাঁদের মোট তিনবার আটক করেছে দিল্লির বিবেকবিহার থানার পুলিশ। যদিও গত সোমবার সন্ধ্যায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ, পরিচয়পত্র হিসেবে আধার ও ভোটার কার্ড দেখালেও পুলিশ সেসব মানছে না। প্রতিবার থানায় পরিচয়পত্র দেখানো সত্ত্বেও পুলিশ বারবার তাঁদের আটক করছে। বাঙালি, বিশেষত মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা জানতে পারলেই বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জেলার বহু শ্রমিক বেশি উপার্জনের আশায় দিল্লিতে কাজে যান। অথচ তাঁদের এভাবে বারবার হেনস্তা করা হচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিকরা এভাবে বারবার হয়রান না করার আর্জি জানিয়েছেন।
এপ্রসঙ্গে ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পুলিশ শ্রমিকদের ছেড়ে দিয়েছে। বর্তমানে সেখানেই তাঁরা কাজ করছেন।
জানা গিয়েছে, মাস চারেক আগে রঘুনাথগঞ্জের এক ঠিকাদারের মাধ্যমে ফরাক্কার ১৫ ও সামশেরগঞ্জের পাঁচজন পরিযায়ী শ্রমিক দিল্লিতে কাজে যান। শ্রমিকরা গাজিয়াবাদ এলাকায় ভাড়াবাড়িতে থাকেন। সেখানে দৈনিক ৫০০টাকা মজুরির বিনিময়ে তাঁরা আশপাশের এলাকায় গিয়ে কাজ করেন। গত সোমবার ভোররাতে শ্রমিকরা ভ্যানে চেপে বিবেকবিহার এলাকায় কাজে যাচ্ছিলেন। রাস্তায় পথ আটকায় পুলিশ। তাঁদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা বললেও পুলিশ শ্রমিকদের বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেয়। শ্রমিকরা পরিচয়পত্র দেখালে পুলিশ সেগুলি ভুয়ো বলে দাবি করে। কলকাতার একজন সহ মোট ২১ শ্রমিককে বিবেকবিহার থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সকলকে থানার লক-আপে রাখা হয়। শ্রমিকরা ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। তিনি ফোন ধরেননি বলে শ্রমিকদের দাবি। বাধ্য হয়ে গাজিয়াবাদের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন পরিযায়ীরা। মূলত তাঁদের কথায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে শ্রমিকরা জানান। ফরাক্কার বাসিন্দা পরিযায়ী শ্রমিক রহমান শেখ ও তাঁর বাবা সফিকুল শেখ সেখানে দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকের কাজ করেন। গাজিয়াবাদ এলাকায় বিগত ১২বছর ধরে রয়েছেন বলে জানান। ফরাক্কা ও সামশেরগঞ্জের অন্তত ৫০০জন শ্রমিক সেখানে রয়েছেন। আশপাশের কারখানায়, দোকানে কিংবা লোকের বাড়িতে তাঁরা কাজ করেন। দীর্ঘদিন সেখানে থাকায় স্থানীয় লোকজন তাঁদের চেনে বলে জানিয়েছেন। তবুও পুলিশ তাঁদের আটক করে হয়রান করে। রহমান শেখ বলেন, পুলিশ রাস্তায় আটকে বলে ‘তোরা বাংলাদেশি?’ মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা বললে এবং আধার কার্ড দেখালেও পুলিশ মানতে চায়নি। আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি বলে পুলিশ দাবি করে। এমনকি, আমাদের পরিচয়পত্রগুলিও নাকি নকল বলে জানায় পুলিশ। তারপর সকলকে থানায় নিয়ে যায়। তিনমাস আগেও একবার আটক করে দু’দিন ছাড়েনি। তার আগেও এভাবে একবার আটক করেছিল।