• হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে বায়ুদূষণ ছাড়াল ৩০০ একিউআই, বাড়ছে শ্বাসকষ্ট
    বর্তমান | ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • শ্যামল সেন, হলদিয়া: হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে বায়ুদূষণ রেকর্ড ছুঁয়েছে। শিল্পাঞ্চলে বায়ুর গুণমান সূচক বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ৩০০ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। বায়ুদূষণ মাপার স্কেল অনুযায়ী সূচকের এই মান ‘গুরুতর’ হিসেবে চিহ্নিত। হলদিয়াজুড়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও হলদিয়া পুরসভার ডিসপ্লে বোর্ডে ওই সূচক জ্বলজ্বল করছে। হলদিয়ার দূষিত বাতাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ থেকে চিকিৎসক সকলেই। বায়ুদূষণের কবলে পড়ে শিল্পশহরের বাসিন্দাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, হলদিয়ায় বায়ুদূষণের বড় কারণ ধূলিকণা। হলদিয়ার বাতাসে পার্টিকুলেট ম্যাটারের পরিমাণও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক উপরে। এজন্য শিশু ও বয়স্করা শীত পড়তেই একটানা কফ কাশির শিকার হচ্ছে। বায়ুদূষণ বাড়তেই অন্যবারের তুলনায় হলদিয়ায় এবার ইনহেলারের বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। ধুলোর জন্য হলদিয়া শহরের রাস্তাঘাটে চলাচলা করাই দায় হয়ে উঠেছে মানুষের। দূষণ ঠেকাতে হলদিয়া পুরসভা ও প্রশাসনের আরও তৎপরতা দাবি করেছে পরিবেশ ও বিজ্ঞান সংগঠনগুলি।

    হলদিয়া পুর এলাকায় শহরের ব্যস্ততম জায়গাগুলিতে অনলাইন ডিসপ্লে বোর্ড বসিয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। সিটি সেন্টারে ওই ডিসপ্লে বোর্ডে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ৩১৩ পয়েন্ট ছুঁয়েছে দেখেই পরিবেশকর্মীরা চমকে ওঠেন। গত এক সপ্তাহ ধরেই হলদিয়ায় বায়ুর গুণমান নিয়ে অনলাইন তথ্যে ওই সূচক ৩০০ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে, বলছেন স্থানীয় অফিস যাত্রীরা। স্থানীয়রা বলেন, কোভিডের সময়ে কয়েক মাস হলদিয়ায় কারখানাগুলি বন্ধ থাকায় এবং গাড়ি চলাচল কমে যাওয়ায় দূষণ অনেক কমে ছিল। ২০২১ সালের পর এবছরই প্রথম বায়ু দূষণমাত্রা অস্বাভাবিক মাত্রায় পৌঁছেছে। হলদিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যাপক বিক্রমজিৎ চৌধুরী বলেন, শিল্প দূষণ তো হলদিয়ায় রয়েছে, সেইসঙ্গে বেড়েছে ধূলিকণা দূষণ। তবে এবারের মতো এত শ্বাসকষ্ট আগে কখনও হতে দেখিনি। এবারের দূষণের মাত্রা বেশি দেখছি। এজন্য শিল্পসংস্থা ও পুরসভাকে কার্বন ক্রেডিট সিস্টেমে দূষণ কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। আরও বেশি করে বড় পাতাযুক্ত এবং কার্বন ও ধূলিকণা শোষণ করে এমন গাছ লাগানোর উপর জোর দিয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা, হলদিয়ার ধূলিকণা দূষণের একটি কারণ হিসেবে বেহাল রাস্তাকে চিহ্নিত করেছে। মূলত সেখান থেকেই হাজার হাজার গাড়ি চলাচলের জন্য ধুলো উড়ে মিশছে বাতাসে।

    হলদিয়ার এক আধিকারিক সুবিমল দাস বলেন, সুতাহাটা রোজ মোটরবাইকে সিটি সেন্টারে অফিস পৌঁছতে গিয়ে ধুলো ও দূষণের জন্য শ্বাস নিতে বেশি কষ্ট হচ্ছে। হলদিয়ায় প্রতিদিন ২০ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মচারী সাইকেল ও বাইকে চেপে সিটি সেন্টার, দুর্গাচক, রানিচক পেরিয়ে বিভিন্ন কারখানা ও বন্দরে কাজে যান। তাঁরা বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার বেশি কষ্ট হচ্ছে। সর্দিকাশি সারতে চাইছে না। দূষণের জন্য চোখ জ্বালা করছে। শ্রমিকরা মাস্ক ও রুমাল বেঁধে, কেউ হেলমেট পরে নিয়মিত যাতায়াত করছেন। হলদিয়ার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সমীররঞ্জন খাঁড়া বলেন, রোগীদের ধরন দেখেই বুঝতে পারছি, এবার হলদিয়ার দূষণের মাত্রা অনেকটাই বেশি। শিশুদের মধ্যে ক্রনিক কাশির প্রবণতা হলদিয়ায় অনেক বেড়েছে দূষণের কারণে। বায়ুদূষণের কারণে স্কিন ডিজিজও বেড়েছে। স্কুল পড়ুয়া শিশুদের কাশি সারছে না দেখে বাধ্য হয়ে ইনহেলার প্রেসক্রাইব করতে হচ্ছে। হলদিয়ার বায়ুদূষণ ঠেকাতে কেন্দ্র সরকার ‘ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম’ প্রকল্পে গত চার বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা দিয়েছে হলদিয়া পুরসভাকে। পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাস্তায় ধূলিকণা দূষণ ঠেকাতে ৫০ লক্ষ টাকা খরচে স্প্রিঙ্কলার লাগানো ওয়াটার ক্যানন মেশিন প্রতিদিন রাস্তায় জল স্প্রে করে। কিন্তু পুরসভার দূষণ ঠেকানোর কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজ্ঞান ও পরিবেশ সংগঠনগুলি। দূষণ পর্ষদের ভূমিকা নিয়েও সরব স্থানীয়রা।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)