• লিঙ্কেজই নেই ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ভোটারের
    বর্তমান | ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: আজ, বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে ইনিউমারেশন ফর্ম জমার সময়সীমা। এসআইআরের প্রথম পর্যায়ের শেষের মুখে যে পরিসংখ্যান সামনে এসেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। পশ্চিম বর্ধমানের মতো অপেক্ষাকৃত কম জনবসতি পূর্ণ জেলায় এক লক্ষ ৪৫ হাজার ভোটার ২০০২ সালের কোনও লিঙ্কেজ দিতে পারেনি। যার ফলে কী হবে তাঁদের ভবিষ্যৎ তা নিয়ে হাজার, হাজার মানুষ উদ্বেগে রয়েছেন। জানা গিয়েছে, মিশ্র সংস্কৃতির এই জেলায় ওড়িশা, বিহার থেকে বহু গরিব মানুষ কাজের খোঁজে আসেন। কয়েক দশক ধরে থাকলেও তাঁদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের ভোটার কার্ডের হদিশ পাওয়া যায়নি। তাঁরাই মূলত বিপাকে। যার ফলে একটি বড় সংখ্যার গরিব মানুষের ভোটার কার্ডের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। 

    শুধু লিঙ্কেজের সমস্যা নয়, মৃত ও স্থায়ীভাবে জেলা থেকে চলে যাওয়া মানুষের সংখ্যাও যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পশ্চিম বর্ধমানে। জানা গিয়েছে, ইনিউমারেশন ফর্ম জমা না পড়ার সংখ্যা ৩ লক্ষ ৬ হাজার ছাপিয়ে গিয়েছে। যা মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ। বুধবার পর্যন্ত জেলাশাসক অফিস থেকে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। বৃহস্পতিবার ইনিউমারেশ ফর্ম জমার সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ্যে আনা হবে। সর্বদলীয় বৈঠকও ডাকা হয়েছে জেলাশাসকের পক্ষ থেকে। গত ৩ ডিসেম্বর সর্বদলীয় বৈঠক থেকে একটি পরিসংখ্যান সামনে এনেছিল জেলা প্রশাসন। সেখানে দেখা গিয়েছিল লিঙ্কেজ না খুঁজে পাওয়া ভোটারের সংখ্যা ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৫২৪। শাসকদল তৃণমূল হুঁশিয়ারি দেয় একজনও বৈধ ভোটারের নাম যেন বাদ না যায় তালিকা থেকে। বহু গরিব মানুষ আগের নথি রাখতে পারেন না। তাঁদের বিষয়টি মানবিকতার সঙ্গে বিবেচনা করার আর্জি জানান হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই শতাংশের বিচারে এই সংখ্যা বেশি ছিল আসানসোল দক্ষিণ, কুলটি ও আসানসোল উত্তরে। যার মধ্যে দু’টি বিধানসভা কেন্দ্র বিজেপির দখলে রয়েছে। এক্ষেত্রে এই তিন এলাকাতেই কাজের সন্ধানে বেশি মানুষ ভিনরাজ্য থেকে এক সময়ে এখানে এসেছিলেন। ৩ ডিসেম্বরের পর প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে বাড়তি নজর দেয়। তারপরও দেখা গিয়েছে এক লক্ষ ৪৫ হাজার ভোটারের পূর্বের কোনও লিঙ্কেজ পাওয়া যাচ্ছে না। আসানসোলের গোপালপুরের বাসিন্দা রানি বাউরি (নাম পরিবর্তিত) বলেন, আমার মা আদিবাসী ছিলেন। বাবা দক্ষিণ ভারতের মানুষ। ইস্কোয় কাজ করতে এসে দু’জনের প্রেম হয়। তাঁদের বাড়িতে কেউ মেনে নেয়নি। পরে বাবা, মাকে ছেড়ে অন্যত্র সংসার করে। আমাদের আদিবাসী মায়ের সেই সময়ের কোনও ভোটার কার্ড নেই। বাবার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। আমি কী করে ২০০২ সালের তাঁদের নথি দেব?

    আসানসোল, রানিগঞ্জ, কুলটির ঘরে ঘরে এই সমস্যা দেখা গিয়েছে। তাঁদের অনেকেই পরিচারিকা। এই গরিব মানুষগুলি রীতিমতো আতঙ্কিত। অন্যদিকে কমিশনের নির্দেশ আসার আগেই হেয়ারিং করার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বৃহৎ সংখ্যাক মানুষকে হেয়ারিং করতে হবে বুঝে নিয়েই বিভিন্ন স্কুলে শিবিরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে এইআরওরা হেয়ারিং নেবেন বলে জানা গিয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)