হলদিয়া ও নন্দীগ্রামে বাতিল প্রায় ২৬ হাজার ভোটার, রাজনৈতিক চর্চা তুঙ্গে
বর্তমান | ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশনে(এসআইআর) শুধুমাত্র হলদিয়া ও নন্দীগ্রাম বিধানসভায় ২৫হাজার ৮৪৮ভোটারের নাম বাদ গেল। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলদিয়াতেই ৫.৭৩শতাংশ নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ল। নন্দীগ্রাম বিধানসভায় তালিকা থেকে ৩.৭৯শতাংশ ভোটারের নাম বাদ পড়ছে। ফি-বছর ভোটার তালিকা সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজন সত্ত্বেও হলদি নদীর দুই তীরে ওই দুই গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভায় ২৫হাজারের বেশি ভূতুড়ে ভোটার ছিল। এসআইআর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেইসব ভোটারের নাম বাদ পড়ল। দুই কেন্দ্রে অসংখ্য মৃত ভোটারের পাশাপাশি কোনও হদিশ না থাকা ৪১১৩ভোটার এবং দু’জায়গায় নাম থাকা আরও ১০৪জনের খোঁজ মিলেছে। প্রত্যেকের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
হলদিয়া বিধানসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২লক্ষ ৬৬হাজার ৯৪৩। তারমধ্যে বিএলওরা মোট ২লক্ষ ৬৬হাজার ৯২৫জনের ইনিউমারেশন ফর্ম পৌঁছে দিয়েছিলেন। ডিজিটাইজেশনের পর দেখা যাচ্ছে, হলদিয়া বিধানসভায় মৃত ভোটারের সংখ্যা ৫৯৮৭জন। ৩০০২জন ভোটারের কোনও হদিশ পাননি বুথ লেভেল অফিসার(বিএলও)। তাঁদের কাছ থেকে ফিলআপ হওয়া ফর্ম আসেনি। সরকারি খাতায় তাঁরা ‘অ্যাবসেন্ট’। এছাড়াও স্থানান্তর হয়ে অন্যত্র ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন আরও ৬২৩৯ভোটার। মেয়েদের বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি এলাকায় ভোটার তালিকায় নাম তোলেন। তাঁদের অনেকেই বাপেরবাড়ির বুথে নাম না কেটেই অন্য বুথে নাম তুলেছেন। সেজন্য শিফ্টিং হিসেবে বিপুল সংখ্যক ভোটারের নাম এসআইআরে বাদ পড়ছে। শুধুমাত্র মেয়েদের বিয়ে নয়, অনেক পরিবার গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে চলে আসছে। সেইসব পরিবারও ভোটার তালিকায় শিফ্টিং হিসেবে নাম তোলার সময় আগের বুথ থেকে নাম কাটেননি। হলদিয়া বিধানসভায় ডুপ্লিকেট ভোটারের সংখ্যা ৬৭জন। সবমিলিয়ে বাদ পড়েছে ১৫হাজার ২৯৫। যা জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ।
নন্দীগ্রাম বিধানসভায় মোট ২লক্ষ ৭৮হাজার ২১২ভোটার ছিলেন। মোট ২লক্ষ ৭৮হাজার ২০৮টি ইনিউমারেশন ফর্ম বিলি হয়। এই বিধানসভায় মৃত ৪৫২৯ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। কোনও খোঁজ না মেলা ভোটারের সংখ্যা ১১১১জন। এছাড়াও শিফ্টিং হিসেবে আরও ৪৮৭৬জনের নাম বাদ গেল। ডুপ্লিকেট হিসেবে বাদ পড়ছে ৩৭জনের নাম। নন্দীগ্রাম বিধানসভায় ডুপ্লিকেট, অন্যজনকে অভিভাবক দেখিয়ে তালিকায় নাম তোলা সহ বেশকিছু অভিযোগ কমিশনে জমা পড়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার কমিশন নিযুক্ত পর্যবেক্ষক নীলম মীনা নন্দীগ্রাম-১ বিডিও অফিসে বসে ২০-২৫জন বিএলওর মুখোমুখি হন। তাঁরা কীভাবে এসআইআরের কাজ করেছেন তানিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন।বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্দিষ্ট গাইডলাইন অনুযায়ী ভোটার তালিকা সংশোধনী করতে নির্দেশ দিত। সেই কাজে নেমে বিএলওরা শাসকদলের চাপে ভুয়ো ভোটারদের নাম বাদ দিতে পারতেন না। ইচ্ছে থাকলেও তাঁরা চাপের মুখে ওই কাজ করতে বাধার সম্মুখীন হতেন। যেকারণে আট-দশ বছর আগে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের নামও তালিকায় থেকে গিয়েছিল।
জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ নির্বাচন কমিশন করে। এই কাজে আমাদের পার্টিকে জড়িয়ে বিজেপি মিথ্যাচারের রাজনীতি করছে।