মাধ্যমিকের প্রস্তুতি হয়নি, নন্দকুমারে প্রেমিকের সঙ্গে পালাল নাবালিকা
বর্তমান | ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: বছর ষোলোর ছাত্রীটি এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কিন্তু, প্রস্তুতি ঠিকমতো না হওয়ায় সেই পরীক্ষা নিয়ে ভীতি ক্রমশ জাঁকিয়ে বসেছিল। পরীক্ষায় না বসার জন্য বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল সে। সেইমতো মাত্র দশদিন আগে ফোনে আলাপ হওয়া মহিষাদলের ইছাপুর গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে নন্দকুমার থানার কুমোরচক গ্রামের ওই ছাত্রী বাড়ি ছাড়ে। সোমবার স্কুলে যাওয়ার কথা বলে পুরষাঘাট খেয়াঘাটে সাইকেল রেখে প্রেমিকের সঙ্গে উধাও হয়ে যায়। তবে, ছাত্রীর ইচ্ছাপূরণ হয়নি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে নন্দকুমার থানার পুলিশ। যদিও তার প্রেমিক বেপাত্তা। পরীক্ষা নিয়ে ভীতি কাটাতে হোমে ওই ছাত্রীর কাউন্সেলিং চলছে।
আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ১১৫টি কেন্দ্রে প্রায় ৬০ হাজার পরীক্ষার্থী এবার মাধ্যমিক দেবে। আগামী সোমবার পর্ষদ সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় তমলুকে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন।
একইদিনে মহিষাদলে কাপাসএড়িয়ায় সেন্টার ইনচার্জদের সঙ্গে মিটিং করবেন। পরীক্ষার প্রস্তুতি জোরকদমে শুরু হয়েছে। কিন্তু, নন্দকুমারের ওই ছাত্রী প্রস্তুতিতে পিছিয়ে পড়েছিল। তাই যাতে পরীক্ষায় না বসতে হয়, তার জন্যই পালিয়েছিল বলে পুলিশকে জানায়।
জানা গিয়েছে, কুমোরচক গ্রামের ওই ছাত্রী ময়না থানার দক্ষিণ ময়নার একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক দেবে। রেজিস্ট্রেশনও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, পরীক্ষার প্রস্তুতি ঠিকমতো হয়নি। এই অবস্থায় ১০ দিন আগে মহিষাদল থানার ইছাপুর গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে ফোনে আলাপ হয়। দ্রুত প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই যুবক রাস্তায় পাইলিংয়ের কাজ করেন। ওই যুগল চম্পট দেওয়ার পর ছাত্রীর মোবাইলে কল লিস্টের সূত্র ধরেই মহিষাদল থানার পুলিশের একটি টিম মঙ্গলবার ইছাপুর গ্রামের ওই যুবকের বাড়িতে পৌঁছে যায়। সে সময়ে ওই যুগল বাড়িতে ছিল না। যুবকের বাড়ির লোকজনকে চাপ দেওয়ার পরই ছাত্রীটির হদিশ মেলে। উদ্ধার হওয়ার পর ছাত্রীটি জানায়, মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি ঠিকমতো হয়নি। তাই বিয়ের সিদ্ধান্ত। যদিও পুলিশের চাপে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেল।
মঙ্গলবার নন্দকুমার থানার বড়গোদাগোদার গ্রামের অষ্টম শ্রেণির আরও এক ছাত্রী স্কুলে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায়। ওই গ্রামেরই এক যুবকের সঙ্গে ছাত্রীটি পালিয়ে যাওয়ার খবর চাউর হতেই গ্রামের লোকজন যুবকের বাড়িতে চড়াও হন। জানা গিয়েছে, ওই যুগল বিয়ে করার জন্য তমলুকে বর্গভীমা মায়ের মন্দিরেও হাজির হয়। কিন্তু, বয়সের সার্টিফিকেট দেখাতে না পারায় পুরোহিত বিয়ে দিতে রাজি হননি। তমলুক থেকে ময়নার একটি মন্দিরে যাওয়ার পথে ওই যুগলকে পাকড়াও করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় প্রেমিক কৃষ্ণপ্রসাদ বর্মনকে। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে হোমে পাঠানো হয়েছে।
বিয়ের মরশুমে নাবালিকাদের পালানোর ঘটনা বেড়েছে। মন্দিরে বিয়ের সময় যাতে পাত্র-পাত্রীর বয়স যাচাই করে নেওয়া হয়, তার জন্য সেজন্য গত রবিবার ময়নার বিডিও জগন্নাথ বিশ্বাস নতুনপুকুর চণ্ডীমন্দির ভিজিট করেন। তিনি এনিয়ে পুরোহিতদের সঙ্গে কথাও বলেন। নাবালিকা বিয়ে রোখার লক্ষ্যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ স্কুলে স্কুলে গিয়ে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ কর্মসূচি নিচ্ছে। নাবালিকা বিয়ের কুফল নিয়ে বোঝানোর পরও এ ধরনের ঘটনা আটকানো যাচ্ছে না।