দীর্ঘ এক যুগের অপেক্ষা, শীঘ্রই পোদরা থেকে রাজাবাগানঘাট রুটে ফেরি সার্ভিস
বর্তমান | ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: ১২ বছর আগে ঘটেছিল ভয়াবহ নৌকাডুবির ঘটনা। নদীতে তলিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল অনেক যাত্রী। এরপরেই বন্ধ হয়ে যায় দক্ষিণ হাওড়ার পোদরাঘাট ও গার্ডেনরিচের রাজাবাগানঘাটের মধ্যে ফেরি চলাচল। অবশেষে এই রুটে শীঘ্রই আবার ফেরি সার্ভিস চালু হতে চলেছে। এই উদ্দেশ্যে পোদরাঘাট ও রাজাবাগানঘাটে আধুনিক জেটি নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। ফেরি সার্ভিস চালু হলে, অর্থসংকটে পড়া হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি লাভের মুখ দেখবে বলে আশা করা হচ্ছে। বুধবার ঘাট দুটি পরিদর্শনে যান দক্ষিণ হাওড়ার বিধায়ক নন্দিতা চৌধুরী এবং সমিতির আধিকারিকরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। পোদরাঘাট থেকে রাজাবাজারঘাটে যাওয়ার সময় যাত্রীবাহী ভুটভুটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। সরকারি লঞ্চ পরিষেবা চালু ছিল। তবু এই রুটে বেআইনিভাবে ভুটভুটি চালানো হচ্ছিল। জোয়ারের তোড়ে নৌকো উলটে জলে তলিয়ে যান অন্তত ২৯ জন যাত্রী। তাঁদের মধ্যে তিনজনের খোঁজই মেলেনি। এর পরেই এই রুটে লঞ্চ পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
হাওড়ার সাঁকরাইল, উলুবেড়িয়া, বাগনান, বাউড়িয়া থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই রুটে নিত্য যাতায়াত করতেন। রুট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়ে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমিতি। রাজ্য পরিবহণ দপ্তর দেড় বছর আগে এই রুটে ফের ফেরি সার্ভিস চালু করার উদ্যোগ নেয়। কয়েক কোটি টাকায় পোদরাঘাট ও রাজাবাগানঘাটে তৈরি করা হয়েছে অত্যাধুনিক কাস্টিং জেটি। টিকিট কাউন্টার, প্রতীক্ষালয়, টয়লেট থেকে শুরু করে লঞ্চে বাইক-সাইকেল পরিবহণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। দুটি লঞ্চঘাটেই বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জেটির বাকি ১০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ।
গুরুত্বপূর্ণ এই রুটে ফেরি সার্ভিস চালু হলে তাদের আয় অনেকখানি বাড়বে বলেই আশা করছে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি। ইতিপূর্বে এই লঞ্চঘাটের দেখভাল ও লঞ্চ চালানোর দায়িত্বে ছিল সমিতি। ফের যাতে সেই দায়িত্ব তারা ফিরে পায় সেজন্য পরিবহণ দপ্তরের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
সমিতির ডিরেক্টর অজয় দে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত লঞ্চ রয়েছে। এই রুটে ফেরি সার্ভিস চালু হলে সবক’টি ঘাটের তুলনায় বেশি আয় হবে এখানে। যেভাবে লোকসানের মধ্য দিয়ে সমিতিকে চলতে হচ্ছে, সেই অন্ধকার কেটে যাবে।’ বর্তমানে বাগবাজার, শোভাবাজার, আহিরিটোলা, গোলাবাড়ি, হাওড়া-১ ও ২, আর্মেনিয়ান, বাবুঘাট, রামকৃষ্ণপুরঘাট এবং গাদিয়াড়া-নুরপুর ঘাটের দায়িত্বে রয়েছে সমিতি। সমিতির দাবি, অধিকাংশ ঘাট থেকে আয় আগের তুলনায় কমে গিয়েছে। বিজ্ঞাপন থেকে যেটুকু আয় হচ্ছে তা দিয়েই আপাতত কর্মীদের বেতন মেটানো হচ্ছে। রাজাবাগানঘাট সংলগ্ন কাপড়ের হাটে ফের ব্যবসায়ী, শ্রমিকদের যাতায়াত শুরু হলে আর্থিক খরা অনেকটাই কাটবে।