• ৫০ লক্ষ টাকা ‘তোলা’ চেয়ে ৩ মাসে ১২টি হুমকি চিঠি, হুলুস্থুল বেহালায়
    বর্তমান | ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সুজিত ভৌমিক, কলকাতা: একের পর এক হুমকি চিঠিকে ঘিরে হুলুস্থুল কাণ্ড কলকাতার ঠাকুপুকুর, বেহালা, হরিদেবপুরে! প্রতিটি চিঠির ভাষা অশ্লীল। গালিগালাজে ঠাসা। হাজারও বানান ভুলে ভরা সেই সব চিঠিতে ৫০ লক্ষ টাকা তোলা চেয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখ থেকে নভেম্বরের ২৮ তারিখ পর্যন্ত এমন মোট ১২টি হুমকি চিঠি এসেছে বিভিন্ন জনের কাছে।  

    হুমকি চিঠি পাওয়ার তালিকায় এসএসকেএম হাসপাতালের ডাক্তার, স্বর্ণ ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী, ফার্নিচার ব্যবসায়ী থেকে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলারের আত্মীয়— কে নেই! এরকম একের পর এক ‘পত্রবাণ’ নিয়ে স্থানীয় থানা তথা কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের মাথার চুল ছেঁড়ার মতো অবস্থা! কিছুতেই হুমকি ও রহস্যে মোড়া উড়ো চিঠির কিনারা করতে পারছে না তারা। ঠাকুরপুকুর থানা এলাকায় আটটি এবং হরিদেবপুর থানা এলাকায় চারটি চিঠি এসেছে। 

    প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, মূলত জোকা, ঠাকুরপুকুর, বড়িষা পোস্ট অফিস থেকে স্পিড পোস্টের মাধ্যমে চিঠিগুলি পাঠানো হচ্ছে। প্রতিটি চিঠির ভাষাই প্রায় এক। সেখানে বলা  হয়েছে,  ৫০ লক্ষ টাকা তোলা দিতে হবে। পুলিশকে জানিয়ে কোনও লাভ হবে না। তোলা না দিলে চিঠির প্রাপককে গুলি করে মারা বা তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ২৮ নভেম্বর স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলার সুদীপ পোল্লের আত্মীয় তথা ব্যবসায়ী বিশ্বজিত বর্মনকে এরকমই এক চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ঠিকানা খামে দেওয়া আছে। দরকারে দোকান বেচে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে যাবি।’ চিঠির প্রেরক আরও দাবি করে, ‘সুদীপ পোল্লেকে আমিই বরো চেয়ারম্যান করেছি।’ সেই চিঠিতে জনৈক ননীর নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘বড়িষা ক্লাবের দুর্গাপুজো থেকে ননী কাটমানি খায়।’  

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, অদ্ভুত ব্যাপার হল, প্রতিটি চিঠি পাঠানো হয়েছে জেমস লং সরণির বাসিন্দা জনৈক দেবশুভ্র পালের নামে। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ দেবশুভ্রবাবুকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনও সূত্র মেলেনি।  তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতে প্রেরক খামের উপর যে মোবাইল নম্বর দিচ্ছেন, তা তাঁর নিজের নয়। বরং অতীতে হুমকি চিঠি পেয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে সেখানে।  

    স্বভাবতই গত তিন মাসে পরপর হুমকি চিঠিকে কেন্দ্র করে রীতিমতো বিব্রত কলকাতা পুলিশ। হাজার চেষ্টা করেও রহস্যের কিনারা করে উঠতে পারেনি তারা। কোনও পোস্ট অফিসে সিসি ক্যামেরা নেই। ফলে নজরদারি চালাতে গিয়েও তেমন কিছু পাচ্ছে না পুলিশ। উলটে পরপর হুমকি চিঠির প্রেক্ষিতে এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক তৈরি হয়ে রয়েছে। কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ ওয়েস্ট) রাহুল দে বলেন, ‘আমরা এই চিঠি-কাণ্ডের তদন্ত করছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনও সূত্র হাতে আসেনি।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)