নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: নিয়োগ সংক্রান্ত নানা জটিলতা সামলাতেই ব্যস্ত স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। একের পর এক আইনি লড়াইয়ে সময় দিতে হচ্ছে। পাশাপাশি চালাতে হচ্ছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। আর এসবের মধ্যে পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে শিক্ষকদের হকের বদলি। প্রায় এক বছর আগে সেই বদলি চালুর নির্দেশ এলেও এখনও তা কার্যকর করা যায়নি। তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েই বদলি আদায় করতে হচ্ছে শিক্ষকদের।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষক বদলির ‘উৎসশ্রী’ পোর্টাল সাসপেন্ড করে শিক্ষাদপ্তর। ফলে থমকে যায় বদলির প্রক্রিয়া। পরবর্তী সময়ে শিক্ষকদের করা মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী রায় দেন, এভাবে বদলি আটকে রাখা যায় না। এটা শিক্ষকদের অধিকার। তারপরেও অবশ্য পোর্টাল খোলা হয়নি। বদলি চাইলে আদালতে গিয়ে মামলা করতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এদিকে, সরকার ক্রমশ সময়সীমা বৃদ্ধি করে ‘উৎসশ্রী’ পোর্টাল সাসপেন্ড রাখছে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে পোর্টালটি। এক বছর আগে মিউচুয়াল ট্রান্সফারের পোর্টাল খোলার নির্দেশ অর্ডার হয়েছিল। পরবর্তীতে তা খোলাও হয়। কিন্তু তার মাধ্যমে একটি বদলিও এখনও পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।
মালদহের বাংলার শিক্ষিকা সঞ্চিতা কর্মকার এমনই সমস্যায় পড়েছিলেন। ‘উৎসশ্রী’ পোর্টাল খোলা থাকার সময় তিনি একটি স্কুলে বদলি পান। সেখানে গিয়ে দেখেন, পোস্টটি আসলে ইংরেজির। পোর্টালের গণ্ডগোলেই তা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ভুগতে হয় তাঁকে। শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে আইনি লড়াইয়ের পর মালদহের বার্লো স্কুলে বদলি পান তিনি। সঞ্চিতাদেবী বলেন, ‘সবার আইনি লড়াইয়ে নামার মতো পরিস্থিতি থাকে না। আর্থিক বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে কি তাঁদের আর বদলি হবে না?’
দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের মামলা লড়ছেন আইনজীবী সুদীপ ঘোষ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকদের হয়রান হতে হচ্ছে। পোর্টাল বন্ধই আছে। তবে বদলির আবেদন করা যাচ্ছে অফলাইনে। যদিও আদালতে এসে মামলা না লড়লে সেই আবেদনে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। আমার সহকর্মী অন্যান্য আইনজীবীদের কাছেও এরকম মামলা প্রচুর আসছে।’ শিক্ষক সংগঠন ‘অল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ শিক্ষাদপ্তর এবং এসএসসির কাছে সম্প্রতি বদলি চালু করার দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। সংগঠনের সম্পাদক চন্দন গড়াই বলেন, ‘কয়েকজন শিক্ষক বা শিক্ষিকার ক্ষেত্রে বিষয়টি এতটাই জরুরি যে বদলি না হলে তাঁরা হয়তো বেশি দিন চাকরি চালিয়ে যেতে পারবেন না। প্রতিদিন আমাদের সংগঠনে এরকম অনেকে যোগাযোগ করছেন।’ মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি, বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতিও এই দাবিতে একাধিক স্মারকলিপি জমা দিয়েছে।
শিক্ষাদপ্তরের এক কর্তা বলেন, ‘পর্ষদ এবং এসএসসি এখন নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলি সামলাতেই ব্যস্ত। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এসএসসি-কে যাবতীয় নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। তার আগে তাদের অন্যদিকে নজর দেওয়ার সময় নেই। মিউচুয়াল ট্রান্সফার করতে গেলেও শুনানি করতে হয়। তার জন্য এসএসসি বা পর্ষদকে সময় দিতে হবে। কিন্তু সেই সময়টাই পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো আগামী বছর থেকে এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করা যেতে পারে।’