• জেলে বসেই সাক্ষী খুনের ‘ছক’ শেখ শাহজাহানের? সন্দেশখালিতে ট্রাকের ধাক্কা গাড়িতে  মৃত ২
    বর্তমান | ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত, কলকাতা ও সংবাদদাতা, বসিরহাট: শাহজাহান মামলায় সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার পথে ‘রহস্যজনক’ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল মূল সাক্ষীর পুত্র সহ দু’জনের। জখম হয়েছেন মূল সাক্ষী ভোলানাথ ঘোষও। শাহজাহান ও তার দলবলের জমি দখল সংক্রান্ত ইডির একটি মামলায় বসিরহাট আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাচ্ছিলেন ভোলানাথবাবুরা। বুধবার সকালে আদালতে যাওয়ার পথে সন্দেশখালির বয়ারমারি ঘোষপাড়ায় উলটোদিক থেকে দুরন্ত গতিতে ছুটে আসা একটি ট্রাক ভোলানাথবাবুর গাড়িকে ধাক্কা মারে। গাড়িটি ছিটকে পড়ে রাস্তার ধারের নয়ানজুলিতে। ট্রাকটিও কাত হয়ে পড়ে জলে। ধাক্কা মারার পরেই অবশ্য ট্রাক ফেলে পালিয়ে যায় চালক। জানা যাচ্ছে, সে শেখ শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ শাগরেদ আব্দুল আলিম মণ্ডল। সন্দেশখালি পর্বে জমি দখলের অভিযোগে সিবিআই গ্রেফতার করেছিল আলিমকে। বর্তমানে সে জামিনে রয়েছে। 

    পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ভোলানাথবাবুর ছোট ছেলে সত্যজিৎ ঘোষ ও গাড়ির চালক শাহানুর আলমের। ঘোষ পরিবারের অভিযোগ, পথের কাঁটা সরাতে জেলে বসেই ভোলানাথবাবুকে খতম করার ছক কষেছিল শাহজাহান। আদালতে যাওয়ার সময় সাধারণত চালকের পাশের আসনে বসেন ভোলানাথবাবু। কিন্তু এদিন সেই আসনে বসেছিলেন তাঁর ছোট ছেলে। ঘাতক ট্রাকের চালকের কাছে সে খবর ছিল না। তাই বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছেন মামলার মূল সাক্ষী ভোলানাথবাবু। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুমুল রাজনৈতিক চর্চা শুরু হয়েছে সুন্দরবনের এই অংশে। 

    রেশন দুর্নীতি মামলায় শাহজাহানের বাড়িতে গিয়ে গত ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি আক্রান্ত হন ইডি আধিকারিকরা। জোর করে জমি-ভেড়ি দখল, চোরাচালান ও মানবপাচারের মতো অপরাধে শাহজাহান ও তার বাহিনীর যুক্ত থাকার তথ্য উঠে আসে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তে। ইডির দায়ের করা মামলায় অন্যতম সাক্ষী ছিলেন ভোলানাথ ঘোষ। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘাতক ট্রাকটি লাউখালির দিক থেকে এসেছিল। শাহজাহানের একদা ঘাঁটি ‘বয়ারমারি’ এলাকায় ইচ্ছাকৃতভাবে ভোলানাথবাবুর গাড়িটিকে ধাক্কা মারার পর ঠেলে তা নয়ানজুলিতে ফেলা হয়। এরপর এক সঙ্গীর মোটর সাইকেলে চেপে পালিয়ে গিয়েছে চালক আলিম মণ্ডল। স্থানীয় মানুষরা ঘটনাস্থলে গিয়ে গাড়ি থেকে তিনজনকে উদ্ধার করেন। পরে মিনাখাঁ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা সত্যজিৎ ও শাহানুরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ভোলানাথবাবুর স্ত্রী পুষ্পরানি ঘোষ ও বড় ছেলে বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, শেখ শাহজাহানই যে ষড়যন্ত্র করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা আমাদের কাছে জলের মতো স্পষ্ট। আমরা চাই, এর যথাযথ তদন্ত হোক।

    ঘাতক ট্রাকটির বর্তমান মালিক জনৈক নজরুল মোল্লা। ট্রাকের ফিটনেস সার্টিফিকেটের সময়সীমা গত ২ নভেম্বর শেষ হয়েছে। পারমিট ফেল হয়েছে ১৪ অক্টোবর। এহেন একটি ট্রাক যে পরিকল্পিতভাবেই রাস্তায় নামানো হয়েছিল, দিনের শেষে তা স্পষ্ট বলে মনে করছেন এলাকার মানুষ। বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, ভোলানাথ খুনের পরিকল্পনা বিগত তিনমাস ধরে শাহজাহান জেলে বসেই করছিল। পাশাপাশি চর্চা, এরপর শাহজাহানদের নতুন টার্গেট—সন্দেশখালি-২ নম্বর ব্লকের প্রথম সারির এক তৃণমূল নেতা। এদিনের ঘটনা নিয়ে ভোলানাথবাবু বলেন, থানায় অভিযোগ জানিয়েছি। পরিকল্পনা করেই এটা ঘটানো হয়েছে। বিজেপি নেতা পলাশ সরকারের দাবি, এটা শাহজাহানেরই পরিকল্পনা। জেলে বসেই করেছে। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাত’র দাবি, ঘটনাটি দুভার্গ্যজনক। তবে এ নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি। বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপার হোসেন মেহেদি রহমানের বক্তব্য, বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ঘাতক গাড়ির চালক পলাতক।
  • Link to this news (বর্তমান)