• আমলা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা, শাগরেদ সহ গ্রেফতার অভিযুক্ত
    বর্তমান | ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: নিজেকে আমলা বলে পরিচয় দিত অভিযুক্ত। সঙ্গে থাকত নীল বাতি লাগানো গাড়ি। স্ত্রী নিজেকে সরকারি দপ্তরের বড়ো কর্ত্রী বলে জানাত। গাড়িতে লেখা থাকত গভর্নমেন্ট অব ওয়েস্ট বেঙ্গল। স্বামী কাউকে বলত পুরসভায় বড়ো পদে রয়েছে। আবার কাউকে বলত নবান্নে বসে। ভুয়ো আমলা সেজে এভাবেই চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা চালাচ্ছিল দম্পতি। কলকাতা পুরসভায় গ্রুপ-সি পদে চাকরি পাইয়ে দেবে বলে এক ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা নিয়েছিল তারা। অভিযোগের ভিত্তিতে ভুয়ো আমলা অরুণাভ মুখোপাধ্যায় ও তার সহযোগী ছোটন দাসকে মঙ্গলবার গভীর রাতে গ্রেফতার করেছে বেলেঘাটা থানা। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে নীল বাতি লাগানো সেই গাড়ি।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মাধবপুরের বাসিন্দা দীপু চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, কিছুদিন আগে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় অরুণাভ ও তার স্ত্রীর। ওইদিন অরুণাভের সঙ্গে ছিল নীল আলো লাগানো একটি গাড়ি। সে নিজেকে সরকারি আধিকারিক পরিচয় দিয়ে জানায়, কলকাতা পুরসভায় গ্রুপ-সি পদে লোক নেওয়া হবে। তারা এই নিয়োগের দায়িত্বে রয়েছে। তার কথায় আশ্বস্ত হন দীপু চক্রবর্তী। অরুণাভ জানায়, সাড়ে চার লক্ষ টাকা লাগবে। সেইমতো তিনি তিন লক্ষ টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এবং ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা নগদে দেন। তাঁকে একটি নিয়োগপত্রও দেওয়া হয়।  সেটি যাচাই করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, এটি জাল। এরপরই তিনি লিখিত অভিযোগ করেন বেলেঘাটা থানায়। অরুণাভ, তার স্ত্রী ও এক শাগরেদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, প্রতারণা সহ একাধিক ধারায় কেস রুজু হয়। অভিযোগকারীর ব্যাংকের নথি বিশ্লেষণ করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ওই টাকা ঢুকেছে অরুণাভের অ্যাকাউন্টে। পুলিশ অভিযুক্তের বাড়িতে তল্লাশি চালালেও তাদের হদিশ পায়নি। এরপর ওই দম্পতির নতুন ফোন নম্বর হাতে পান তদন্তকারীরা। মঙ্গলবার সেই সূত্র ধরেই হানা দিয়ে অরুণাভ ও ছোটনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

    ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, অরুণাভ নিজেকে আমলা বলে পরিচয় দিত। বিভিন্ন জায়গায় চায়ের দোকান বা জনবহুল এলাকায় নীল আলো লাগানো গাড়ি পার্কিং করে কথা বলত এলাকাবাসীর সঙ্গে। চালক গাড়ি থেকে নেমে জনে জনে বলত, ‘স্যার বড়ো আমলা, রাজ্যে বিভিন্ন সরকারি পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে তাঁর। স্যারকে ধরলে কোনও না কোনও জায়গায় ঠিক চাকরি হয়ে যাবে।’ কেউ আগ্রহ দেখালে অরুণাভর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিত সে। স্ত্রী সরকারি অফিসার পরিচয় দিয়ে ইন্টারভিউ নিত। তারপর চাওয়া হত টাকা। পেমেন্ট হাতে পাওয়ার পর অভিযুক্তরা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের জাল নিয়োগপত্র দিত। এই কায়দায় তারা বহু লোকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। প্রতারণার অঙ্ক কয়েক কোটি বলে জানা গিয়েছে। এই টাকা কোথায় রেখেছে তারা, তার খোঁজ চলছে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)