• না-থাকা ধারার কথা বলে রায়! জজকে নতুন পাঠ নিতে নির্দেশ
    এই সময় | ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • অমিত চক্রবর্তী

    আইন আছে, তবে যে ধারার কথা খোদ বিচারক করেছিলেন, উল্লেখ তার কোনও অস্তিত্বই নেই। অথচ বিবাহ বিচ্ছেদের একটি মামলায় শিলিগুড়িতে বাপের বাড়ি, এমন এক তরুণীর আবেদন মেনে দিল্লির একটি আদালত ডিভোর্সের নির্দেশ দিয়েছিল না-থাকা সেই ধারার উল্লেখ করে। সেই নির্দেশ দিল্লি হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়। দিল্লি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ দিল্লির ওই নিম্ন আদালতের রায়ের তীব্র সমালোচনা করে সেটি খারিজ করেছে এবং নিম্ন আদালতের ওই বিচারক হরিশ কুমারকে ডিভোর্স-মামলার ব্যাপারে নতুন করে প্রশিক্ষণ নিতে নির্দেশ দিয়েছে।

    মামলাটা শুরু হয়েছিল শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে। তবে ওই তরুণী পরে কর্মসূত্রে দিল্লিতে চলে যান। সুপ্রিম কোর্টে তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে বিচ্ছেদের মামলা সরানো হয় দিল্লির একটি ফ্যামিলি কোর্টে। সেই কোর্টই আইনের অস্তিত্বহীন এক ধারার প্রসঙ্গ তুলে রায় দিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের তোপের মুখে পড়েছে। প্রথমে, ২০২১-এ শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে ওই তরুণী তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করেন। সেগুলো খারিজ হয়ে যায়। ওই সব মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট নারীদের নিরাপত্তায় তৈরি আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে বলে কড়া পর্যবেক্ষণ দেয়। তরুণীর ওই মামলাগুলো খারিজ করে কলকাতা হাইকোর্টও।

    আদালত সূত্রের খবর, বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দিল্লির ফ্যামিলি কোর্টে উঠলে আদালত মামলাকারী তরুণীকে তাঁর অভিযোগের সপক্ষে তথ্যপ্রমাণ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেটা তিনি করেননি। আদালত তখন তাঁর স্বামীকে নথি জমা দিতে বলে। কিন্তু যেহেতু মামলাকারী তথ্যপ্রমাণ দেননি, তাই ওই যুবকও পিছিয়ে যান। যদিও ফ্যামিলি কোর্টের বিচারক জানান, আদালতের প্রচুর সময় নষ্ট হয়েছে এবং সেই যুক্তিতে তিনি তরুণীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ডিভোর্সের পক্ষে রায় দেন। আর ওই রায় দিতে গিয়ে দিল্লির ফ্যামিলি কোর্টের বিচারক হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টের ওই মামলায় স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টের ২৮-এ নামে একটি ধারার উল্লেখ করেন। ওই রায় চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তরুণীর স্বামী।

    অভিযোগ করা হয়, কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই দিল্লির ফ্যামিলি কোর্টের বিচারক ওই রায় দিয়েছেন। দিল্লি হাইকোর্টে দায়ের হওয়া মামলায় তরুণীর স্বামীর আইনজীবী সুমনশঙ্কর ভুইয়া নথি দিয়ে দেখান, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টের ২৮-এ ধারার জন্য একটা সময়ে বিল আনা হলেও সেটা শেষ পর্যন্ত সংসদে পাশ হয়ে কিংবা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেয়ে আইন হয়নি। আদালত সূত্রের খবর, ওই নথি দেখে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি অনিল ক্ষেত্রপাল ও বিচারপতি হরিশ বৈদ্যনাথন শঙ্করের ডিভিশন বেঞ্চ ফ্যামিলি কোর্টের বিচারককে ভর্ৎসনা করে ডিভোর্সের রায় খারিজ করেছেন। একই সঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চ অন্য কোনও বিচারককে নতুন করে ওই মামলার তথ্যপ্রমাণ গ্রহণ করে তার ভিত্তিতে ফের বিচার করে রায় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

    শুধু তা-ই নয়, ফ্যামিলি কোর্টের সেই বিচারক হরিশ কুমার যতদিন না বিচারের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, ততদিন তাঁকে ওই ধরনের মামলার বিচারের ভার না-দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়ে শিলিগুড়ির তরুণীর সঙ্গে হাবড়ার যুবকের পরিচয় হয়। কালেদিনে দু'জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় এবং তাঁদের বিয়ে হয় ২০১১ সালে। বিয়ের পরে দু'জনেই পিএইচডি ডিগ্রি পান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তাঁদের সন্তান হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই অশান্তি শুরু। ২০১৮-তে শিলিগুড়ির বাপের বাড়িতে চলে যান তরুণী।

  • Link to this news (এই সময়)