এই সময়, বরাহনগর: এক যৌনকর্মীকে বিয়ে করার জেদ ধরেছে ছেলে। তার দাবি, বিয়ের পর ওই যৌনকর্মী ও তাঁর মাকে নিয়ে নিজেদের পৈতৃক বাড়িতে বাস করতে দিতে হবে। ছেলের আবদারে আপত্তি জানান বিধবা মা। তাই মাকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে তাঁকে মারধর করার পর বিবস্ত্র করে ভিডিয়ো তোলে ছেলে। তার পর এই শীতের রাতে কার্যত বিবস্ত্র অবস্থায় প্রৌঢ়া মাকে উত্তর কলকাতার ওই যৌনপল্লিতে ফেলে দিয়ে আসে গুণধর ছেলে। ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটেছে বরাহনগর থানা এলাকায়। মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ছেলেকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত যুবকের বাড়ি বরাহনগরেই। বছর তিরিশের ওই যুবকের বাবা প্রয়াত হয়েছেন ১৫ বছর আগে। মা এবং কলেজ পড়ুয়া বোনকে নিয়েই তাদের সংসার। বাবা চাকরি করতেন। তাঁর কিছু জমানো টাকা ছিল। ওই যুবক আগে একটা গ্যারাজ চালাতেন। পরিবারের দাবি, গত কয়েক বছর ধরে কুসঙ্গে পড়ে বখে যায় সে। গ্যারাজের ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে আর্থিক অনটনেই চলছিল সংসার। গোদের উপরে বিষফোড়ার মতো শুরু হয়েছিল ছেলের অত্যাচার। অভিযোগ, কোনও না কোনও অজুহাতে মায়ের সঙ্গে অশান্তি করত ওই যুবক। অকারণে মা ও বোনকে মারধর, গালিগালাজও করত।
সম্প্রতি উত্তর কলকাতার একটি যৌনপল্লিতে যাতায়াত শুরু করেছিল ওই যুবক। সেখানে যাওয়ার সূত্রেই এক যৌনকর্মী মহিলার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ওই যুবকের। গত সোমবার রাত দুটোর সময় যৌনপল্লি থেকে বাড়িতে ফেরে সে। বাড়িতে এসে সে ওই যৌনকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কের কথা মাকে জানায়। ওই মহিলাকে সে বাড়িতে নিয়ে আসতে চায় বলেও জানায়। জানিয়ে দেয়, ওই যৌনকর্মীর সঙ্গে তাঁর মা–ও বরাহনগরের বাড়িতে আসবেন। তাঁদের সঙ্গেই মা এবং বোনকে থাকতে হবে।
কিন্তু ছেলের এই প্রস্তাবে রাজি হননি মা। অভিযোগ, ওই প্রৌঢ়া প্রতিবাদ করলে গুণধর ছেলে মারধর ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। অভিযোগ, মায়ের পরনের শাড়ি খুলে গলায় ফাঁস দিয়ে খুনের চেষ্টাও করে সে। ছেলের মারধরে রক্তাক্ত হন মা। এতেই শান্ত হয়নি ওই যুবক। অভিযোগ, মাকে একপ্রকার বিবস্ত্র করে ভিডিয়ো তোলার পর মাকে গভীর রাতে ওই যৌনপল্লিতে নিয়ে আসে ছেলে। সেখানে তাঁকে ছেড়ে দিয়ে চলে আসে ওই যুবক। ওই যৌনকর্মীকে নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য চাপ দিলেও মা রাজি হননি। জানা গিয়েছে, ওই যৌনকর্মীও শেষ পর্যন্ত আসতে রাজি হননি বরাহনগরের বাড়িতে।
মঙ্গলবার ভোরে প্রৌঢ়া মা কোনও রকমে ওই যৌনপল্লি থেকে চলে আসেন বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা করানোর পর সকালে বাড়ি ফেরেন তিনি। শেষে মঙ্গলবার রাতে বরাহনগর থানায় ছেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, মায়ের অভিযোগের তদন্তে নেমে ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই যুবকের বিরুদ্ধে মারধর, শ্লীলতাহানি, খুনের চেষ্টা ও বাড়িতে অপরিচিত লোক ঢোকানোর চেষ্টার ধারায় মামলা করেছে পুলিশ।
এই ঘটনার পর দৃশ্যতই বিধ্বস্ত ওই প্রৌঢ়া মহিলা। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘ছেলের অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি। কিন্তু ও যে এমনটা করবে তা আমি ভাবতেই পারিনি! প্রাণে বাঁচতেই থানায় অভিযোগ করেছি।’