দিব্যেন্দু সিনহা, জলপাইগুড়ি
সকলে ব্যস্ত ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (সার) নিয়ে। তাই কমে গিয়েছে রক্তদান শিবিরের সংখ্যা। এর প্রভাব পড়ছে ব্লাড ব্যাঙ্কে। জলপাইগুড়ি মেডিক্যালে রক্তের সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে। রক্তের জন্য মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ ক্লাবের পাশাপাশি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছেও আর্জি জানিয়েছেন। মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্কে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরেই রক্তের ঘাটতি চলছিল। তবে বছর শেষে 'সার'-এর কাজ শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি আরও সঙ্কটজনক হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্মীরা। তাঁদের দাবি, গত দু'মাসে হাতে গোনা পাঁচ-ছ'টি রক্তদান শিবির হলেও চলতি ডিসেম্বর মাসে এখনও পর্যন্ত একটিও ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়নি। এর ফলে রক্তের মজুত বিপজ্জনক ভাবে কমে গিয়েছে।
বুধবার দুপুর পর্যন্ত ব্লাড ব্যাঙ্কে 'এ' পজিটিভ মাত্র ১ ইউনিট, 'বি' পজিটিভ ৩ ইউনিট, 'এবি' পজিটিভ ২ ইউনিট এবং ও পজিটিভমাত্র ৫ ইউনিট রক্ত ছিল। একটিও নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত মজুত ছিল না। এই ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকেই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, মাতৃমা হাসপাতাল, জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন নার্সিংহোম ছাড়াও রাজগঞ্জ, হলদিবাড়ি এবং ময়নাগুড়ির হাসপাতালগুলিতে রক্ত সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন মোট ৫০ থেকে ৬০ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন পড়ে। ফলে পর্যাপ্ত রক্ত সংগ্রহের জন্য নিয়মিত রক্তদান শিবির আয়োজন করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে সেই আয়োজন যথেষ্ট না হওয়ায় সমস্যা বাড়ছে।
ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, অক্টোবরে ৬টি ক্যাম্প থেকে ২১৮ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এসেছিল আরও ১,২৭৬ ইউনিট। নভেম্বর মাসে ৮টি ক্যাম্পে মেলে ৩৫০ ইউনিট রক্ত এবং এক্সচেঞ্জে আসে ১,৩৬৬ ইউনিট। ডিসেম্বর মাসে এখনও পর্যন্ত কোনও ক্যাম্প না হওয়ায় রক্তের ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। কর্মীদের একাংশের মতে, রক্ত সংগ্রহের ক্ষেত্রে মূল ভরসা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ক্লাব এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলি।
'সার' শুরু হওয়ায় রাজনৈতিক দলের কর্মীরা এখন ব্যস্ত, ফলে ক্যাম্পের সংখ্যা কমে গিয়েছে। পাশাপাশি বহু অরাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যরাও 'সার' সংক্রান্ত কাজকর্মে যুক্ত। শহরতলি এবং গ্রামাঞ্চলের ক্লাবগুলি সাধারণত আলু লাগানো এবং ধান কাটার মরশুমে ক্যাম্প আয়োজন করে না। এর ফলে রক্তদান শিবিরের সংখ্যা আরও কমে গিয়েছে। কর্মীরা জানান, রোগীর আত্মীয়দের 'ডোনার' নিয়ে আসতে বলা হচ্ছে। সে ভাবেই কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত ক্যাম্প না হলে এইভাবে দীর্ঘদিন চালানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা। গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনেক ক্যাম্প হয়েছিল, এ বার হচ্ছে না।
জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি কল্যাণ খাঁ বলেন, 'রক্ত সঙ্কট মেটাতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন ক্লাব এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন কলেজ ছাড়াও পুলিশ এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছেও চিঠি পাঠানো হয়েছে।' এতে পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে আগামী মাসে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠতে পারে, এই আশঙ্কা রয়েছে।