• চিকেনস নেক-কে অশান্ত করতে মাদকের ব্যবসা! উদ্বেগ গোয়েন্দা বিভাগে
    এই সময় | ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • মিঠুন ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি

    শিলিগুড়ি করিডর বা চিকেনস নেক-কে অশান্ত করতেই কি পাকিস্তানের মাদক ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে জঙ্গি সংগঠনগুলি? সাম্প্রতিক সময়ে মাদক উদ্ধারের বিভিন্ন ঘটনায় এমনই উদ্বেগ ছড়িয়েছে গোয়েন্দা বিভাগের অন্দরে। গত সাত দিনে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের বিভিন্ন এলাকায় ব্রাউন সুগার, গাঁজা, কাফ সিরাপ সমেত মাদকদ্রব্য উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন থানা, স্পেশাল টাস্ক ফোর্স, স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ, বিএসএফ এসএসবি-সহ বিভিন্ন এজেন্সি মাদক উদ্ধার করেছে।

    গত ছ'মাসের মধ্যে শিলিগুড়ি কমিশনারেট এলাকা থেকে কুড়ি কোটি টাকারও বেশি মূল্যের মাদক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ কেজিরও বেশি ব্রাউন সুগার উদ্ধার হয়েছে ওই এলাকা থেকে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১০৫ জনকে। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি রাকেশ সিং বলেন, 'মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলবে।' পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, গত কয়েক বছরে উত্তরবঙ্গ এবং শিলিগুড়ির পার্শ্ববর্তী এলাকায় মাদকের চাহিদা ব্যাপক আকারে বেড়েছে। এ ছাড়াও চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহৃত বিভিন্ন কেমিক্যালও মাদক হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে।

    বেশিরভাগ মাদক তৈরি হচ্ছে 'গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল' অঞ্চলে। মূলত মায়ানমার, লাওস ও থাইল্যান্ডের ত্রিভুজাকৃতি অঞ্চলকে বলা হয় গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল। মিয়ানমারের শান ও সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকার লুকোনো ল্যাবে তৈরি হচ্ছে হেরোইন, ব্রাউন সুগার ও মেথামফেটামিন। এরপর সেগুলো বিভিন্ন নদীপথ ও পাহাড়ি রুট ধরে মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ডে ঢোকে। সেখান থেকে ছোট প্যাকেট করে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মূলত তিনটি রুট ব্যবহার করা হয়।

    একটি রুট আমনাজি, শিলচর, গুয়াহাটি হয়ে সড়কপথে শিলিগুড়িতে আসে। অন্যটি মণিপুর, অসম হয়ে, আর তৃতীয়টি মিজোরাম, ত্রিপুরা, অসম হয়ে উত্তরবঙ্গে প্রবেশ করে। স্বাস্থ্যসামগ্রী, নিত্যপণ্য বা যাত্রিবাহী গাড়ির আড়ালে এ সব সহজে পাড়ি দেয় বাইরে। শিলিগুড়িতে পৌঁছে মাদকদ্রব্যের একাংশ স্থানীয় বাজারে ছড়িয়ে পড়ে, অন্য অংশটি রেল ও সড়কপথ এবং ব্যক্তিগত গাড়িতে বিহার, উত্তরপ্রদেশ হয়ে বাংলাদেশের দিকে চলে যায়।

    সেনা গোয়েন্দাদের মতে, মিয়ানমার থেকে কিছু মাদক সরাসরি ঢুকে যায় বাংলাদেশে। এই কারবারে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই টাকা পয়সা দিয়ে ব্যবসায়ীদের সাহায্য করে। সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে বেশি ধরা পড়েছে ব্রাউন সুগার, হেরোইন ও ইয়াবা। পাশাপাশি গাঁজা, কাফ সিরাপ ও অন্যান্য ফার্মাসিউটিক্যাল দ্রব্য নিয়মিত ঢুকছে শিলিগুড়ি করিডর এলাকায়। ইদানীং মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকার কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণীদের ব্যবহার করছে। দ্রুত উপার্জনের আশায় কমবয়সি অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে মাদক কারবারে। এ সব বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন কোড নেমও ব্যবহার করা হচ্ছে।

    ব্রাউন সুগারকে 'চিনি', 'ধুলো', হেরোইনকে 'দুধ', 'চা' ক্রিস্টাল মেথকে 'কাচ' বা 'বরফ' ইয়াবাকে 'লাল চকোলেট' বা 'ট্যাব' গাঁজাকে 'তেজপাতা' কাফ সিরাপকে 'লাল বোতল' বা 'কোল্ড ড্রিঙ্ক' নাম দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারত ও উত্তরবঙ্গে কারবার চালানো হচ্ছে। রাজ্য পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, 'মাদক কারবারে পুলিশ জ়িরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে মাদক সামগ্রী উত্তরবঙ্গে না ঢুকতে দেওয়াটাই এখন আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেইমতো পুলিশের বিভিন্ন এজেন্সি ও বিভাগকে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

  • Link to this news (এই সময়)