• গলায় আটকে চিকেন প্যাটি, বেরোবে কীসে! পদ্মে ভিন্নমত
    এই সময় | ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: কথাটা এখন শোনা যাচ্ছে বঙ্গ–বিজেপির অন্দরেই— তাদের গলায় আটকেছে চিকেন প্যাটি। সেই প্যাটি কী ভাবে বার করা হবে, তা নিয়ে নানা মত পদ্মবনে। কেউ দুষছেন গলাকেই, কারও মতে, সব দোষ ওই চিকেন প্যাটি–র! সব মিলিয়ে, বঙ্গ–বিজেপির অন্দরে দ্বন্দ্বের নতুন হেতু চিকেন প্যাটি।

    গত রবিবার, ৭ নভেম্বর ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সাধু–সন্তদের ডাকে অনুষ্ঠিত হয় ‘পাঁচ লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ’ কর্মসূচি। সেখানে সাধু–সন্তরা ছাড়াও ভিড় জমিয়েছিলেন বিভিন্ন স্তরের বিজেপি নেতা–কর্মীরা। সেখানেই চিকেন প্যাটি বা আমিষ প্যাটি বিক্রির ‘অপরাধে’ শেখ রিয়াজুল নামে এক প্যাটি–বিক্রেতাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর কাছে থাকা তিন হাজার টাকার চিকেন ও ভেজিটেবল প্যাটি ফেলে নষ্ট করে দেওয়া হয় এবং কিছু আপত্তিকর ও বিদ্বেষমূলক শব্দ ব্যবহার করে তাঁর ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ভাইরাল হয়েছে মধ্যবয়সি রিয়াজুলকে হেনস্থার ভিডিয়ো (‘এই সময়’ ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি)।

    সিপিএম নেতা ও আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলির আরামবাগের ওই প্যাটি–বিক্রেতার পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর তরফে ময়দান থানায় এফআইআর করেন। রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাঙালির আমিষ খাওয়া বন্ধ করে দেবে— এ কথা তুলে ধরে প্রচার শুরু করেছে তৃণমূল। নেটিজেনদের একাংশও প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

    বিজেপি সূত্রের খবর, ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে রাজ্য দলে শুরু হয় চুলচেরা বিশ্লেষণ। কারণ, বিপদ দু’দিকেই। প্যাটি–বিক্রেতার পাশে দাঁড়ালে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে, আবার হামলার ঘটনাকে বৈধতা দিলে বাংলার উদারমনস্ক, আমিষপ্রিয় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারেন। যে সংখ্যাটা উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের চেয়ে কম নয় বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের অভিমত। তাই, ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’— এই টানাপড়েনের মধ্যেই বুধবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘প্যাটিওয়া‍লাকে আমাদের কেউ মারধর করেনি।’ লকেট বোঝানোর চেষ্টা করেন, গরিব প্যাটি–বিক্রেতাকে মারধর করা বিজেপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি নয়। তাঁর কথায়, ‘আমাদের দলের কেউ এ কাজ করতে পারে না। আসলে গীতাপাঠ অনুষ্ঠানের বদনাম করার জন্য এ সব করা হয়েছে।’

    কিন্তু গেরুয়া শিবির সূত্রের খবর, লকেটের এই মন্তব্যে ক্ষোভ তৈরি হয় কট্টরপন্থীদের অনেকের মধ্যে। তাঁদের ‘ঠান্ডা’ করতে তাই এ দিন সন্ধ্যায় আসরে নামতে হয় কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারকে। সুকান্ত বলেন, ‘কারা করেছে, কী করেছে সেটা স্পষ্ট নয়। হয়তো কিছু মানুষের ধর্মীয় ভাবাবাগে আঘাত লেগেছিল।’ তার পরেই তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘মসজিদের সামনে গিয়ে কি মদ বিক্রি করা যায়?’ অর্থাৎ, মসজিদের সামনে মদ বিক্রি না–করা গেলে ব্রিগেডে গীতাপাঠের কর্মসূচিতে কেন চিকেন প্যাটি বিক্রি করা যাবে, ঠারেঠোরে সেই প্রশ্ন তুলেছেন বঙ্গ–বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি। বিকেলে লকেটের সাংবাদিক বৈঠকের কিছুক্ষণের মধ্যেই সুকান্তর এই বক্তব্য আসলে বিজেপির ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন। সুকান্তর কথা শুনে তেড়েফুঁড়ে ওঠা বিজেপির কট্টরপন্থীদের একাংশের তরফে প্রচার শুরু হয়, ভেজ প্যাটি বলে আসলে চিকেন প্যাটি বিক্রি করছিলেন ওই প্যাটিওয়ালা, এটা প্রতারণা। সূত্রের খবর, প্যাটিওয়ালার বিরুদ্ধে মামলার তোড়জোড়ও শুরু করেছেন বিজেপির আইনজীবী নেতাদের একাংশ।

    তবে বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, বিধানসভা ভোটের আগে ‘চিকেন প্যাটি’র বিরুদ্ধে সুর চড়ানো যথেষ্ট ঝুঁকির, তাই প্যাটি নিয়ে আর ঘাঁটাঘাঁটির দরকার নেই। বঙ্গ–বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘মুরগি খান না, এমন হিন্দু বাঙালির সংখ্যা এখন হাতে গোনা। তাই কে প্রকৃত দোষী, তা নিয়ে আমরা যত চর্চা করব, তৃণমূলের ততই আমাদের বাঙালি–বিরোধী বলতে সুবিধে হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)