ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কার্যালয়ে বিষ মেশানো নরম পানীয় খাইয়ে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের বগপুরের বাসিন্দা, পেশায় মুহুরি সুমন্ত মল্লিককে (৩৪) খুনের অভিযোগেগত শনিবার দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে নাদনঘাট থানার পুলিশ। পুলিশের দাবি, হেফাজতে নিয়ে ধৃত মৃত্যুঞ্জয় রায় এবং দীপঙ্কর মালিককে জেরা করে জানা যায়, পেশাগত শত্রুতার জেরেই খুন করা হয়েছিল সুমন্তকে। ঘটনাটি ঘটেছিল ২৫ সেপ্টেম্বর, দুর্গাপুজোর ছুটি পড়ার আগের দিন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই দিন বিএলআরও চলে গেলেও দফতরে ছিলেন কয়েক জন আধিকারিক ও কর্মী। ছিলেন ওই কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত কয়েক জনও। নবদ্বীপের একটি দোকান থেকে আনা হয়েছিল বিরিয়ানি। সেই বিরিয়ানি ও নরম পানীয় খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন রেভিনিউ অফিসার কুন্তল মণ্ডল এবং সুমন্ত। শ্রীরামপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা সুমন্তকে মৃত বলে জানান। বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসার পরে সুস্থ হন রেভিনিউ অফিসার। মৃতের পরিবারের তরফে নাদনঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ হয়। পেশাগত শত্রুতার কারণে পরিকল্পনা করে সুমন্তকে খুন করা হয়েছেল বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের।
বিরিয়ানি ও ঠান্ডা পানীয়ের নমুনা সংগ্রহ করেন ফুড সেফটি অফিসার। প্রথমে তদন্তকারীরা মনে করেছিলেন, বিরিয়ানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন দু’জন। পরে একটি বিষয়ে খটকা লাগে তাঁদের। সে দিন সন্ধ্যায় বিরিয়ানি অনেকেই খেয়েছিলেন। বাকিদের কেন কিছু হয়নি, সেই প্রশ্ন ভাবায় তদন্তকারীদের। ময়না তদন্তের রিপোর্ট এবং বেশ কিছু পরীক্ষার পরে পুলিশ নিশ্চিত হয়, বিরিয়ানি নয়, মুহুরির মৃত্যু হয়েছে বিষ মেশানো নরম পানীয় খেয়ে। তার পরেই মৃত্যুঞ্জয় এবং দীপঙ্করকে গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) রাহুল কুমার বলেন, ‘‘বিশেষ দল গঠন করে তদন্ত শুরু হয়েছিল। মৃত্যুঞ্জয় এবং দীপঙ্করকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে পাওয়া গিয়েছে, সুমন্তের সঙ্গে পেশাগত এবং অর্থনৈতিক শত্রুতা ছিল ধৃতদের। সেই কারণে সুমন্তের নরম পানীয়ের মধ্যে কিছু রাসায়নিক মিশিয়ে দিয়েছিল ওরা। তার পরেই বিষক্রিয়া শুরু হয়। ধৃতেরা খুনের অভিযোগ স্বীকার করেছে।’’ রেভিনিউ অফিসার কেন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তা জানা যায়নি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, ওঁকে বিষ মেশানো নরম পানীয় খাওয়ানোর প্রমাণ মেলেনি। তবে তাঁর অসুস্থতার বিষয়টিও তদন্তাধীন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত্যুঞ্জয়ের দোকান রয়েছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কার্যালয়ের কাছে। দীপঙ্কর পেশায় মুহুরি।
বিএলআরও (পূর্বস্থলী ১) সৌরভ রক্ষিতের বক্তব্য, ‘‘এমন ঘটনা যে কার্যালয় চত্বরে ঘটবে, তা ভাবা যায়নি।’’