বকেয়ার খোঁজ না করার পুর নোটিসের পরেও মেলা, বিতর্ক তুঙ্গে
আনন্দবাজার | ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
কলকাতা পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা এক বছর ধরে অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা (কমিউটেশন, গ্র্যাচুইটি) থেকে বঞ্চিত। ওই বকেয়া মেটাতে পুর প্রশাসনের প্রয়োজন প্রায় ২০০ কোটি টাকা। দু’বছর ধরে ঠিকাদারদের বকেয়া রয়েছে হাজার কোটি টাকারও বেশি। সেই টাকা আদায়ে তাঁরা প্রায় প্রতিদিন পুর ভবনে এসে দরবার করছেন। ঠিকাদারদের ‘বিরক্তি’ এড়াতে পুর অর্থ বিভাগের দরজায় নোটিস সাঁটা হয়েছে। যার বক্তব্য, ‘বকেয়া পেতে খোঁজ করবেন না। আদেশানুসারে, স্পেশাল চিফ মিউনিসিপ্যাল ফিনান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার’। কোষাগারের এ হেন সঙ্গিন দশা সত্ত্বেও কলকাতা পুরসভার তরফে এই প্রথম স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেলা আয়োজন করা ঘিরে তীব্র বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
আগামী ২৭-৩১ জানুয়ারি দক্ষিণ কলকাতার ট্রায়াঙ্গুলার পার্কে এই মেলা হওয়ার কথা। প্রস্তুতি নিয়ে মঙ্গলবার ১৬টি বরোর চেয়ারম্যানদের নিয়ে বৈঠক করেন পুরসভার সমাজকল্যাণ বিভাগের মেয়র পারিষদ মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়। হাজির ছিলেন পুর আধিকারিকেরা। সূত্রের খবর, এমন মেলার আয়োজন পুরসভা করে না বলে তাঁরা সরব হন। মেয়র পারিষদদের সঙ্গে আধিকারিকদের বাদানুবাদও হয়। মেলা ছোট করার কথা বলেন তিন নম্বর বরোর চেয়ারম্যান অনিন্দ্যকিশোর রাউত। কিন্তু মেয়র পারিষদদের চাপে ঠিক হয়, মেলায় ৬৪টি স্টল থাকবে। পুর হিসাব অনুযায়ী, স্টল-পিছু ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ হলে খরচ প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা।
আধিকারিকদের একাংশেরই প্রশ্ন, পুরসভার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। কোষাগারের এমন অবস্থায় প্রতি জেলার সবলা মেলা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। সেখানে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেলা করা কতটা যুক্তিযুক্ত? জবাবে মেয়র পারিষদ মিতালি বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই পুরসভা এই প্রথম এমন মেলার আয়োজন করতে চলেছে। মেয়র যদি মনে করেন কোষাগারের অবস্থা খারাপ, তিনি মেলা বন্ধ করে দেবেন।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, অর্থসঙ্কটের জেরে এক লক্ষ টাকার বেশি কোনও বকেয়া আপাতত মেটানো হচ্ছে না। এরই মধ্যে অর্থ বিভাগের ঘরের দরজায় বকেয়া সংক্রান্ত নোটিস ঝোলানোকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বুধবার বেশ কয়েক জন ঠিকাদার বকেয়া নিতে পুর ভবনে এসে ওই নোটিস দেখে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হন। তাঁরা সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, এর পর থেকে তাঁরা যেন যে বিভাগে বকেয়া পাওয়ার কথা, সেখানে খোঁজ নেন। ঠিকাদারদের আরও অভিযোগ, তাঁরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিকদের কাছে গেলে বলা হচ্ছে, এ বিষয়ে তাঁরা কিছু জানেন না।
বিজেপির পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষ বলেন, ‘‘পুরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা প্রাপ্য বকেয়া পাচ্ছেন না। ঠিকাদারেরা দু’বছর ধরে টাকা পাচ্ছেন না। এই অবস্থায় মেলা করা মানে তুঘলকিপনা ছাড়া কিছুই নয়।’’