এই সময়, বনগাঁ: চাঁদপাড়ার গ্রামীণ হাসপাতালের পর এ বার শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটল শিক্ষাঙ্গনে। অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে স্কুলেরই এক অস্থায়ী কর্মীর বিরুদ্ধে। বুধবার নাবালিকা ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনার প্রতিবাদ এবং অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবিতে স্কুলে বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধ থেকে ক্লাসরুমে ভাঙচুর চালাল ক্ষুব্ধ ছাত্রী, অভিভাবক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযুক্তকে ধরে গণধোলাই দেয় ক্ষুব্ধ মানুষ। পুলিশ অভিযুক্তকে উদ্ধার করতে গেলে ক্ষুদ্ধ ছাত্রী ও স্থানীয়রা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করে। এর জেরে বুধবার রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে বনগাঁর ওই হাইস্কুল।
নির্যাতিতা ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে স্কুলে গিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে বনগাঁ থানার পুলিশ। ধৃতের নাম সুপ্রভাত সাধু (৪২) ওরফে টুরে। শ্লীলতাহানির ঘটনার প্রতিবাদে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ও অন্যান্য শিক্ষিকাদের স্কুলের মধ্যেই আটকে রাখেন ক্ষুব্ধ ছাত্রী ও অভিভাবকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আসে বিরাট পুলিশ বাহিনী-সহ র্যাফ। বনগাঁ থানার পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। বনগাঁ-বাগদা রোডের ধারেই গাড়াপোতা পঞ্চায়েত এলাকায় রয়েছে ওই হাইস্কুল। আগে ওই স্কুলে ক্যান্টিন চালাত অভিযুক্ত সুপ্রভাত। পরে সে ওই স্কুলে অস্থায়ী পদে চাকরি পায়।
বহু বছর ধরে চাকরি করার সুবাদে স্কুলের ছোট ছোট ছাত্রীরা তাকে কাকু বলে ডাকে। সেই কাকুর হাতেই শ্লীলতাহানির শিকার হতে হয় অষ্টম শ্রেণির এক নাবালিকা ছাত্রীকে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন অষ্টম শ্রেণির সংস্কৃত এবং নবম শ্রেণির ইতিহাস পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা দিতে এসেছিল অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রী। স্কুল থেকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তির পরিকল্পনা ছিল। ওই ছাত্রীর। তাই পরীক্ষার আগে দুই বান্ধবীকে নিয়ে তিনতলায় স্কুলের বই জমা দিতে যাচ্ছিল সে। অভিযোগ, দেখা হতেই সুপ্রভাত তাকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেটের ফর্ম নিতে বলে। কিন্তু বাকি দুই ছাত্রীকে সরিয়ে দিয়ে সে একাই আসতে বলে ওই ছাত্রীকে। অভিযোগ, একা থাকার সুযোগে স্কুলের সিঁড়িতেই ওই ছাত্রীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে সুপ্রভাত। কোনও রকমে ছাড়া পেয়ে পরীক্ষা দিতে বসেছিল ওই ছাত্রী। কিন্তু মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরীক্ষা শেষ করতে পারেনি সে। সেন্টার থেকে বেরিয়ে গোটা বিষয়টি পরিবারকে জানিয়ে দেয় ওই ছাত্রী।
বিষয়টি জানাজানি হতেই ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে অন্যান্য ছাত্রীরা তেতক্ষণে স্কুলে এসে জমায়েত হন অভিভাবক থেকে স্থানীয় বাসিন্দারাও। স্কুলের মধ্যেই অভিযুক্তকে ধরে গণপিটুনি শুরু করে ছাত্রীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে বনগাঁ থানার বিরাট পুলিশ বাহিনী। অভিযুক্তকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের হাত থেকে তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ক্ষুব্ধ মানুষ। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে আরও পুলিশ এবং র্যাফ মোতায়েন করা হয় স্কুলে। এর পরেই ঘটনার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবিতে উত্তেজিত ছাত্রী ও বাসিন্দারা স্কুলের সামনে বনগাঁ-বাগদা রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ভাঙচুর চালানো হয় ক্লাসরুমের চেয়ার টেবিল। সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘেরাও হয়ে থাকতে হয় শিক্ষিকাদের। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, 'আমি নিজের ঘরে ছিলাম। অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করেছে অস্থায়ী কর্মী। পুলিশ অভিযুক্তকে নিয়ে গেছে। নিন্দনীয় ঘটনা। পুলিশ প্রশাসন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। আলোচনা করে স্কুলের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।'